মানবজীবনের অন্যতম আলোচিত প্রতারণার রূপ হলো — মিথ্যা বলা। কখনো কারও মন ভালো রাখতে, আবার কখনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ‘নিরীহ’ মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হলেও, ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দেওয়া অনেক সময় ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অনেকেই আছেন, সম্পর্কের মধ্যে থেকেও সঙ্গীর কাছে নানা বিষয় গোপন করেন বা মিথ্যা বলেন। অথচ, একটি সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস। যদি কোনো একজন নিয়মিত মিথ্যা বলেন, তাহলে সম্পর্কে অবিশ্বাসের দেয়াল গড়ে ওঠে—যার পরিণতি হয় ভাঙন।
তবে চিন্তার কিছু নেই। একটু সচেতন হলেই বোঝা সম্ভব, আপনার সঙ্গী সত্য বলছেন, না কি আপনাকে ফাঁকি দিচ্ছেন।
টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে মনোবিজ্ঞানীরা কিছু লক্ষণ তুলে ধরেছেন—যেগুলো দেখে বুঝে নেওয়া যায়, কেউ মিথ্যা বলছেন কি না।
১. শরীরী ভাষা লুকায় না মিথ্যা
সাউদার্ন কানেকটিকাট স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক কেভিন কলওয়েল বলেন, “মিথ্যাবাদীরা সচেতনভাবে মিথ্যা লুকাতে চাইলেও তাঁদের শরীরী ভাষা সব বলে দেয়।”
এফবিআইয়ের সাবেক এজেন্ট জিম ক্লেমেন্ট জানান, মিথ্যা বলার সময় মানুষ সাধারণত চোখে চোখ রাখতে পারেন না, ঘামতে থাকেন, ঠোঁট ভেজাতে থাকেন, চেয়ার দোলান, বারবার গলা পরিষ্কার করেন বা হাত-পা নাড়ান। এসব অস্বাভাবিক আচরণ মিথ্যা বলার মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ।
২. ঘটনার শুরু থেকে বলা এবং বাক্য পুনরাবৃত্তি
গবেষকরা বলেন, সত্যিকারের অভিজ্ঞতা থেকে কেউ যখন কথা বলেন, তখন তারা বিষয়টির গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকেই বর্ণনা শুরু করেন। কিন্তু মিথ্যাবাদীরা একেবারে শুরু থেকে বিস্তারিত বলে যান, যেন মুখস্থ করা স্ক্রিপ্ট পড়ছেন। এ ছাড়া, মিথ্যাবাদীরা একই তথ্য বা বাক্য বারবার বলেন, যাতে গল্পে ফাঁক না থাকে। এই পুনরাবৃত্তি তাঁদের প্রস্তুত বক্তব্যের লক্ষণ হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত সাবলীলতা ও সর্বনাম এড়িয়ে যাওয়া
মিথ্যাবাদীরা অনেক সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝরঝরে ও গুছানোভাবে কথা বলেন। এটা তাঁদের মনের পূর্বপ্রস্তুতির ফল। অধ্যাপক কলওয়েল বলেন, “কারও কথা যদি অস্বাভাবিকভাবে পরিষ্কার, বিন্যস্ত ও প্রাঞ্জল মনে হয়, তবে সন্দেহ করা যৌক্তিক।”
তারা প্রায়ই নিজের উপস্থিতি গোপন করতে সর্বনাম এড়িয়ে যান। যেমন—‘আমি খেয়েছি’ না বলে বলেন ‘দুপুরে খেয়েছি’—যাতে বোঝা না যায়, কে কার সঙ্গে ছিলেন।
৪. আচরণ ও আবেগে অসামঞ্জস্যতা
গুরুতর কোনো বিষয়ের কথা বলার সময় যদি কেউ হাসিমুখে থাকে বা সাধারণভাবে আচরণ করে, তবে সেটিও মিথ্যার ইঙ্গিত হতে পারে। ক্লেমেন্ট বলেন, “সত্যিকারের অনুভূতি চোখেমুখে ফুটে ওঠে। কিন্তু মিথ্যাবাদীদের মুখে থাকে অনভিব্যক্তি, চোখে থাকে অতিরিক্ত স্থিরতা।”
৫. অস্পষ্টতা ও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা
‘সম্ভবত’, ‘মনে হয়’, ‘হয়তো’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে মিথ্যাবাদীরা নিজের অবস্থান অস্পষ্ট রাখেন। কেউ কেউ আবার সরাসরি মিথ্যা না বলে কৌশলে প্রশ্ন এড়িয়ে যান—যা আরও সন্দেহজনক।
সম্পর্কের টেকসই ভিত্তি গড়তে হলে স্বচ্ছতা ও সততা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গী যদি বারবার মিথ্যা বলেন, তবে তা শুধু সম্পর্কের ক্ষতি করে না—বরং মানসিক চাপ ও অবিশ্বাসের কারণও হয়ে ওঠে। তাই একটু সচেতন থাকুন, এবং প্রয়োজনে সততার ভিত্তিতেই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করুন।