বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন সোমবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বারে অনুষ্ঠিত জাতীয় নদী কনভেনশন ২০২৫-এ তাদের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। কনভেনশনটিতে নদীকে জীবন সত্ত্বা হিসেবে রক্ষা করা, জাতীয় সম্পদে পরিণত করা এবং নদী উন্নয়নে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের নদী রক্ষা শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সুপ্রিম কোর্ট নদীকে জীবন সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদীর অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ এখনও সীমিত।
এই কনভেনশনে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার সাদত এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ার হোসেন হুবহু ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রে নদী রক্ষা, নদী উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকারে নদীকে আনার জন্য ১৭ দফা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘোষনা পত্রটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:
বন্ধুগণ,
পৃথিবীর বৃহত্তম ‘ব’ দ্বীপ বাংলাদেশ, ভাটির দেশ বাংলাদেশ, নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশ, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শ্লোগান ছিল ুপদ্মা- মেঘনা- যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা”। বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন বাংলাদেশের নদ নদী, পানি পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় ১৭ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে ২০০৫ সাল থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট নদীকে জীবন সত্ত্বা ঘোষণা করেছেন এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদীর অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ এখনও অনুপস্থিত।
আমরা উপলব্ধি করছি, বাংলাদেশের নদী রক্ষা কোনো কেবল প্রযুক্তিগত বিষয় নয়—এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তাই আমরা দৃঢ় প্রত্যয় করছি যে, নদী রক্ষা এখন জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রশ্ন। আমরা চাই—
১. নদীকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
২. জাতীয় বাজেটে নদী উন্নয়ন ও নদী অর্থনীতির জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হোক।
৩. সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনী ইশতেহারে নদী রক্ষার অঙ্গীকার রাখুক।
৪. উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক এবং যমুনা নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক।
৫. বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত নদী রক্ষা ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশন আইনে আন্তর্জাতিক আদালতের শরনাপন্ন হওয়া হোক।
৬. নদীর অপদখল, দূষণ, খনন, বালি উত্তোলন ও ভাঙ্গন রোধে মহাপরিকল্পনা গ্রহণসহ ডেলটা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়ন করা হোক।
৭. জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে প্রশাসনিক ক্ষমতাসম্পন্ন সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ করা হোক এবং সুপ্রিম কোর্টের ১৭ দফা নির্দেশনা দ্রুত কার্যকর করা হোক।
৮. নদী দখল ও দূষণে সম্পৃক্তদের বিচারের জন্য দ্রুত নদী ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হোক।
৯. সরকারিভাবে ‘জাতীয় নদী পদক পুরস্কার” প্রদান করা হোক।
বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হলো—নদীকে জীবন সত্ত্বা হিসেবে রক্ষা করা, জাতীয় সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকারে আনা হবে।