শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ সারাদেশ

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বিশিষ্ট সমাজসেবী অলি উদ্দিন আহমেদ এর ৪১ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত


প্রকাশ :

গত ২৮ জানুয়ারী বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আওয়ামী লীগের নেতা, লোহাকুচি হাই স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট সমাজসেবক জননেতা অলিউদ্দিন আহমেদ এর ৪১ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হবে। দিবসটি পালনে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের মালপাড়া গ্রামে কোরআন খানি, মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও মরহুমের কবর জিয়ারত করা হয়। এতে মরহুমের পুত্র, কন্যা আত্মীয় স্বজন, মসজিদের খতিব, ঈমাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ আমন্ত্রিত ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অলি উদ্দিন আহমেদ ১৯২০ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের মালগাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম ফারাজ উলাহ্ সরকার ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত গোড়ল ইউনিয়ন বোর্ডের পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পিতার জীবদ্দাশায় পুত্র অলি উদ্দিন আহমেদ ১৯৫৪ সালে গোড়ল ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা চালান। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বিডি (বেসিক ডেমোক্রেসি) মেম্বার হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহ্ পক্ষে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তানের নির্বর্তনমূলক (সেফটি এ্যাক্ট) আইনে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। কারামুক্তির পর ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন করে জনমত গড়ে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালের আইয়ুব বিরোধী গণঅভূত্থানে কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ- সভাপতি হিসেবে জনগণকে সংগঠিত করেন। ১৯৭০ সালের সাধারন নির্বাচনে নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে জয় সুনিশ্চিত করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে কালীগঞ্জ থানার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষত: ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রথমার্ধে লোহাকুচি সীমান্ত ফাঁড়িতে নিজে অবস্থান করে অবাঙ্গালী ইপিআর হত্যা করে অস্ত্র সংগ্রহে তৎকালীন ইপিআর ক্যাপ্টেন নওয়াজিস হোসেন ও তার দলকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। তাছাড়া তিনি তৎকালীন রংপুর হারাগাছের নির্বাচিত এমএনএ আউয়াল সাহেবসহ হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও অসহায়  মানুষকে ভারতে অবস্থানে সহায়তা করেন। তিনি এমএনএ আউয়াল সাহেব ও তার ছোট ভাই ওমর আলীকে সাথে নিয়ে ভারতের কুচবিহার ও দিনহাটায় ভারতীয় লোক সভার ও বিধান সভার সদস্যসহ ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময় করেন। 

এসময় তিনি বাঙ্গালীদের সমস্যা ও দুরাবস্থার কথা তুলে ধরলে ভারতের নেতৃবৃন্দ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। তিনি লোহাকুচি সীমান্তের ওপারে ভারতের কুচবিহার জেলার চামটা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে যুব সমাজকে ট্রেনিং সেন্টারের রের প্রেরণ করেন। তিনি অন্যের সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং এ প্রেরণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তার ছোট ভাই আব্দুস সাত্তার (যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা), ভাতিজা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম (প্লাটুন কমান্ডার) ও পুত্র বীরমুক্তিযোদ্ধা এ.কে.এম সিরাজুল ইসলাম এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা গেরিলা লিডার ড. এস.এম শফিকুল ইসলাম কানু কে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনে পাঠিয়েছিলেন। এছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অলি উদ্দিন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের উষালগ্নে লোহাকুচি সীমান্তে কাস্টমস অফিস স্থাপন করে সেখানকার কাস্টম্স কর্মকর্তা হিসেবে রাজস্ব আদায় করে মুজিব নগর সরকারের নিকট অর্থ প্রেরন করেছিলেন। তাইতো মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অবিস্মরণীয়। 

অলি উদ্দিন আহমেদ একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সমাজ সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অবদান রাখেন। তিনি অত্রাঞ্চলে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট, ব্রীজ ও কালভাট নির্মানসহ আজীবন সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করেন। তিনি লোহাকুচি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তার সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শিক্ষা বিস্তার সহ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উন্নয়নের কাজে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।