মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ জাতীয়

গণভোট ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হ্যাঁ–না’ প্রতিযোগিতা, রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক


প্রকাশ :

গণভোট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে, শুরু হয়েছে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোট ঘিরে এক ধরনের ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতা। রাজনৈতিক অবস্থান অনুযায়ী ব্যবহারকারীরা নিজেদের মত প্রকাশ করছেন নানা পোস্ট, ব্যানার, স্লোগান ও স্ট্যাটাসে। কেউ বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন, কেউ আবার নিছক মজা হিসেবেও নিচ্ছেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব জমা দেয়, যেখানে সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করা হয়। কমিশনের প্রস্তাব ছিল— জাতীয় নির্বাচনের আগে অথবা নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। এই ঘোষণার পর থেকেই অনলাইনে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক।

‘গণভোট’ শব্দটি ফেসবুকে সার্চ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগত পেজে ‘হ্যাঁ ভোট দিন’, ‘জুলাই সনদের পক্ষে হ্যাঁ বলুন’ ইত্যাদি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু পেজে দাবি করা হচ্ছে, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলো ‘না’ ভোটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, আর জুলাই আন্দোলনের পক্ষে থাকা দলগুলো ‘হ্যাঁ’ ভোটের প্রচারে নেমেছে।

অন্যদিকে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন তাঁদের ফেসবুক আইডিতে ‘না!’ লেখা পোস্টার প্রকাশ করেছেন। এই পোস্ট বিএনপি ও ছাত্রদলের বহু নেতা–কর্মীর পেজেও শেয়ার হয়েছে। অনেকে আবার মন্তব্যের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছেন— কেউ বলছেন ‘হ্যাঁ’, কেউ বলছেন ‘না’, আবার কেউ কেউ পুরো বিষয়টাই বুঝে উঠতে না পেরে প্রশ্ন করছেন, ‘গণভোট কী?’ বা ‘কেন গণভোট দরকার?’

গণভোট নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এখন বিপরীত অবস্থানে। বিএনপি চায়, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে জামায়াত চায়, নভেম্বরে আলাদা করে গণভোটের আয়োজন করা হোক।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, গণভোট আগে হবে না পরে— এই বিতর্কে জামায়াত ও বিএনপি উভয়ই সময় নষ্ট করছে। তাঁর ভাষায়, “এই কুতর্কের মধ্যে এনসিপি যাবে না। বরং দুই দলেরই উচিত নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপির জন্ম হয়েছিল এক সময় ‘হ্যাঁ ভোটের’ মধ্য দিয়ে। এবার যদি তারা ‘না ভোটে’ অনড় থাকে, তাহলে সেই ‘না ভোট’ দিয়েই দলের রাজনৈতিক মৃত্যু হবে। বিএনপি বড় দল, তাদের উচিত নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দায়িত্বশীল থাকা।”

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বৃহস্পতিবারের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই আদেশ জারির পরেই গণভোট আয়োজন করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন সম্ভব নয়। সময়ের সীমাবদ্ধতা, বিপুল অর্থ ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত দায়িত্বের কারণে নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন হবে অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত।”

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনুভা জাবীন ফেসবুকে লিখেছেন, “জুলাই সনদ যাতে বাস্তবায়ন না হয়, সে জন্য যারা ‘না ভোট’-এর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে, তারা অজান্তেই ‘হ্যাঁ ভোট’-কেই আরও শক্ত করছে। গণমানুষ নীরবে বিপ্লব ঘটাবে।”

ফেসবুকে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ পোস্টের ঢল এখন অনলাইন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দুই পক্ষের সমর্থকরা পোস্ট, মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছেন, যা রাজনীতিতেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, গণভোট কবে হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি আরও বলেন, “গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ এখন চরম পর্যায়ে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা কেবল তাকে সহায়তা করার জন্য আছি।”