মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ জাতীয়

নতুন পে স্কেলে মূল বেতন ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব


প্রকাশ :

নতুন জাতীয় পে স্কেলে মূল বেতন গ্রেড অনুযায়ী ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। প্রস্তাবনাটি ইতোমধ্যে জাতীয় বেতন কমিশনের সভাপতির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের পে প্রপোজাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, প্রস্তাবিত কাঠামোয় ২০টি গ্রেডের বেতন পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “২০০৯ সালে কার্যকর হয় ৭ম জাতীয় পে স্কেল, আর ২০১৫ সালে আসে ৮ম। তখন মূল বেতন প্রায় ২০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এরপর টানা ১০ বছর কেটে গেলেও নতুন কোনো পে স্কেল ঘোষণা হয়নি। যদি ২০২০ ও ২০২৫ সালে যথাক্রমে দুটি নতুন স্কেল চালু করা হতো, তাহলে এই সময়ের মধ্যে বেতন প্রায় ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেত।”

তার হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে প্রথম গ্রেডের বেতন দাঁড়াত ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং ২০তম গ্রেডের ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। আর ২০২৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রথম গ্রেডে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা ও ২০তম গ্রেডে ৩৩ হাজার টাকায় পৌঁছাত।

সংবাদ সম্মেলনে নতুন প্রস্তাবিত কাঠামোয় প্রতিটি গ্রেডে বেতন বৃদ্ধির হিসাবও তুলে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ,

  • ১ম গ্রেডে ৮ম জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী মূল বেতন ছিল ৭৮,০০০ টাকা (নির্ধারিত), যা প্রস্তাবিত ৯ম জাতীয় বেতনস্কেলে হবে ৯৪,৪০০ টাকা;
  • ২য় গ্রেডে মূল বেতন ছিল ৬৬,০০০–৭৬,৪৯০, নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী হবে ৮০,০০০–৯২,৫৩৭ টাকা;
  • ৩য় গ্রেডে ছিল ৫৬,০০০–৭৪,৪০০, প্রস্তাবিত হয়েছে ৬৭,৭৬০–৮৯,০২৪ টাকা;
  • ৪র্থ গ্রেডে ছিল ৫০,০০০–৭১,২০০, নতুন প্রস্তাব ৬০,৬০০–৮৬,১৫২ টাকা;
  • ৫ম গ্রেডে মূল বেতন ৪৩,০০০–৬৯,৮৫০, প্রস্তাবিত ৫২,০৩০–৮৪,৫৫০ টাকা;
  • ৬ষ্ঠ গ্রেডে ৩৫,৫০০–৬৭,০১০, প্রস্তাবিত ৪২,৯৫৫–৮১,০৮৩ টাকা;
  • ৭ম গ্রেডে ২৯,০০০–৬৩,৪১০, নতুন প্রস্তাবে ৩৫,০৯০–৭৬,৭২৭ টাকা;
  • ৮ম গ্রেডে ২৩,০০০–৫৫,৪৭০, প্রস্তাবিত ২৭,৮৩০–৬৭,১২১ টাকা;
  • ৯ম গ্রেডে ২২,০০০–৫৩,০৬০, প্রস্তাবিত ২৬,৬২০–৬৪,২০৩ টাকা;
  • ১০ম গ্রেডে ১৬,০০০–৩৮,৬৪০, নতুন প্রস্তাব ১৯,৩৬০–৪৬,৭৫৪ টাকা;
  • ১১তম গ্রেডে ১২,০০০–৩০,২৩০, প্রস্তাবিত ১৪,৫২০–৩৬,৫৮০ টাকা;
  • ১২তম গ্রেডে ১১,০০০–২৬,৫৯০, নতুন প্রস্তাব ১৩,৩১০–৩২,১৭৪ টাকা;
  • ১৩তম গ্রেডে ১১,০০০–২৬,৫৯০, প্রস্তাবিত ১৩,৩১০–৩২,১৭৪ টাকা;
  • ১৪তম গ্রেডে ১০,২০০–২৪,৬৮০, নতুন প্রস্তাব ১২,৩৪২–২৯,৮৬৬ টাকা;
  • ১৫তম গ্রেডে ৯,৮০০–২৩,৪৯০, প্রস্তাবিত ১১,৮৫৮–২৮,৪২২ টাকা;
  • ১৬তম গ্রেডে ৯,৩০০–২২,৪৯০, নতুন প্রস্তাব ১১,৩৩৩–২৭,২১৩ টাকা;
  • ১৭তম গ্রেডে ৯,০০০–২১,৮০০, প্রস্তাবিত ১০,৮৯০–২৬,৩৭৮ টাকা;
  • ১৮তম গ্রেডে ৮,০০০–২০,০১০, নতুন প্রস্তাব ৯,৬৮০–২৪,২১২ টাকা;
  • ১৯তম গ্রেডে ৮,০০০–১৬,৮৫০, প্রস্তাবিত ৯,৬৮০–২০,৩৪৮ টাকা;
  • ২০তম গ্রেডে ৮,২৫০–২০,০১০, প্রস্তাবিত ৯,৯৮৩–২৪,২১২ টাকা;

এভাবে ক্রমানুসারে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত বেতন কাঠামোর বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়।

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “গত এক দশকে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাস্তবতার সঙ্গে আর মেলে না। নতুন প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কর্মচারীদের জীবনমান উন্নত হবে।”

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে চায়। সূত্র বলছে, নতুন পে স্কেল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই কার্যকর হতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নে যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে, তা সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, “ডিসেম্বরে বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হবে। পে কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে—সম্ভবত আগামী বছরের শুরুতেই নতুন স্কেল কার্যকর করা যাবে।”