তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শুরু করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করছেন অ্যাডভোকেট ড. শরীফ ভুঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
এর আগে, গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেন আপিল বিভাগ। সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় আজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুনানি শুরু হলো।
১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু হয়। তবে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম. সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রিট খারিজ করেন। কিন্তু আপিলে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে।
এরপর ২০১১ সালের ৩ জুলাই সংসদে পাস হয় পঞ্চদশ সংশোধনী, যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হয়। তারপর থেকে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে।
তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মোড় আসে। এর পরপরই নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আইনি পথে এগোয়।
২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক প্রথম রিভিউ আবেদন করেন। অন্য আবেদনকারীরা ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, এম. হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভুঁইয়া এবং জাহরা রহমান।
পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (১৬ অক্টোবর), জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (২৩ অক্টোবর) এবং নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথকভাবে একই বিষয়ে আবেদন করেন।
ফলে নাগরিক উদ্যোগ ও রাজনৈতিক দল মিলিয়ে এখন মোট চারটি রিভিউ আবেদন একসঙ্গে শুনছে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিয়ে আমরা সাময়িক সমাধান দিতে চাই না। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে টেকসই ও কার্যকর সমাধান চাই, যাতে গণতন্ত্র বারবার ব্যাহত না হয় এবং এটি ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী কাঠামো তৈরি করে।”
তিনি আরও মন্তব্য করেন, যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়, তবে এটি কখন থেকে কার্যকর হবে— সেই প্রশ্নও আদালতের বিবেচনায় রয়েছে।