মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ জাতীয়

‘ফ্যাসিস্টদের দোসরদের শাস্তি না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে’: সারজিস আলম


প্রকাশ :

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, বিপ্লবীদের নিরাপত্তা ও গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত না করে কেবল দায়সারা নির্বাচন আয়োজন করা হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের মুখোমুখি হতে হবে।

রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রংপুর নগরীর পুলিশ হলরুমে এনসিপি রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

সারজিস আলম বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। “আমার দৃঢ় বিশ্বাস—ফ্যাসিস্টদের তোষামদকারী দোসররা এখনো শাস্তির বাইরে আছে। তারা অডিও-ভিডিও কলের মাধ্যমে নির্দেশনা পেয়ে এসব নাশকতা চালাচ্ছে।” এ বিষয়ে সরকারের গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের অতিরিক্ত ‘সুশীল’ মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। “গতকাল বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে হাজারো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একজনের প্রতি দয়া দেখাতে গিয়ে হাজার পরিবারের প্রতি অন্যায় করা যায় না। এখন সরকারের দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে—এতে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের আস্থা বাড়বে।”

সারজিস আলম বলেন, জুলাইয়ের শহীদ পরিবারগুলো আজ চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সম্মানী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। “সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাতে আপত্তি নেই; কিন্তু জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, খুনি হাসিনাসহ গণহত্যার বিচার, মোদির বিরুদ্ধে আন্দোলন, শাপলা চত্বরে গণঅভ্যুত্থানের বিচার ও শহীদ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে দায়সারা নির্বাচন দিলে সরকারকে প্রথমে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে।”

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পতনে কোনো রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ছিল না—ছাত্র ও সাধারণ জনগণই তাকে পতনের মুখে ফেলেছে। তাই সরকারকে অনুরোধ করবো, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আগে সমাধান করুন, তারপর নির্বাচনের আলোচনা করুন।” সবকিছু উপেক্ষা করে শুধু নির্বাচনের কথা বললে সরকারের ভাবমূর্তি ও জনগণের আস্থা দুইই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, দেশের মানুষ—যে দলেরই হোক না কেন—জুলাই সনদের আইনগত বাস্তবায়ন চায়। “যারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে, তাদের অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছেন—এই দায়সারা স্বাক্ষর কি সত্যিই সনদ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে? বিএনপি তাদের জায়গা থেকে ছয়-সাতটি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, তাতে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো—গণভোটে সনদ বাস্তবায়ন হলে ক্ষমতাসীনরা কি ওই ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উপেক্ষা করে সব সংস্কার বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে? জনগণ এই বিষয়ে স্পষ্ট জবাব চায়, আমরাও তাই চাই।”

তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে যাওয়া মানে সরকারের এক্সিট প্রক্রিয়া শুরু করা। “এটি জনগণের প্রত্যাশা বা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

শাপলা প্রতীক প্রসঙ্গে সারজিস আলম জানান, এনসিপি শাপলা প্রতীকের দাবিতে অনড় অবস্থানে আছে। “কোনো আইনগত বাধা না থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন যদি প্রভাবিত হয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করে, তাহলে এনসিপি রাজপথে আন্দোলনে নামবে।” তিনি জানান, এনসিপির প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিতভাবে সব কথা জানিয়েছে এবং আইনজীবীরাও বলেছেন, শাপলা প্রতীক দিতে কোনো আইনি বাধা নেই। “এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।”

সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি জানান, আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে। এতে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপি জেলার প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল্লাহ গালিব, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী সাদিয়া ফারজানা দিনা, এনসিপি নেতা আলমগীর নয়ন, আলমগীর হোসেনসহ অন্যরা।