নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে বিধি লঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সম্প্রতি ইসি সচিবালয় থেকে পাঠানো চিঠির কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছে দলটি।
এনসিপির দাবি, ‘শাপলা’ প্রতীককে ঘিরে জনসাধারণের সঙ্গে দলের একটি গভীর মানসিক ও আবেগঘন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তাই কমিশনের প্রণীত নতুন প্রতীক তালিকা থেকে অন্য কোনো প্রতীক গ্রহণ তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এর আগে গত ১৪ অক্টোবর ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে বিকল্প প্রতীকের নাম দিতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নাম না দিলে কমিশন নিজ বিবেচনায় প্রতীক বরাদ্দ দেবে।
ইসির ওই চিঠির জবাবে এনসিপি জানায়, দলটি গত ২২ জুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে এবং ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের অনুরোধ জানায়। এরপর ৩ আগস্ট, ২৪ সেপ্টেম্বর ও ৭ অক্টোবর তিন দফায় দরখাস্ত দাখিল করে তারা প্রতীকের তিনটি বিকল্প—১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, ৩. লাল শাপলা—বরাদ্দ দিতে অনুরোধ জানায়। এমনকি প্রতীকটিকে দৃশ্যমান করতে তারা শাপলার একাধিক নকশাও কমিশনে উপস্থাপন করেছিল।
তাদের অভিযোগ, এসব আবেদন অনিষ্পন্ন রেখেই ইসি সচিবালয় ১৩ অক্টোবর একটি চিঠি পাঠায়। এনসিপি চিঠিটিকে ‘বিধি-বহির্ভূত’, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, ‘স্বেচ্ছাচারী’ ও ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়েছে। দলটির ভাষ্য, ওই চিঠির মাধ্যমে ইসি দলটির ওপর ইচ্ছামতো প্রতীক চাপিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে এনসিপি বলেছে, সব নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতি সমতা ও আইনের আশ্রয়ে ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। প্রতীক বরাদ্দের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই দায়িত্ব থেকে কমিশন অব্যাহতি নিতে পারে না।
দলটি আরও জানিয়েছে, ইসিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে কোন নীতিমালা বা মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘শাপলা’ প্রতীকটি প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো নীতিমালা না থাকে, তবে তা অবিলম্বে প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে হবে।
এনসিপি উল্লেখ করেছে, নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে যেতে হলে কমিশনকে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮’-এর বিধি ৭ (২) ও তফসিলের ফরম-২ অনুযায়ী দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। ওই ফরম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কমিশনের পক্ষ থেকে এর ব্যত্যয় ঘটানো বা নিজের ইচ্ছায় প্রতীক নির্ধারণের কোনো সুযোগ নেই।
চিঠির শেষাংশে এনসিপি বলেছে, প্রতীক ইস্যুতে ইসির আচরণ ‘অন্যায্য’ এবং এটি জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে যে, কমিশন জনগণের সঙ্গে তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সম্পর্ক এড়িয়ে চলছে কিনা।
দলটির মতে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন অতীতের ‘ফ্যাসিবাদী আমলের পাতানো নির্বাচন আয়োজনকারী কমিশন’ থেকে নিজেদের আলাদা করতে পারছে না। এতে দেশ আবারও রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছে এনসিপি।
দলটি আশা করছে, ইসি দ্রুত ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯ (১) সংশোধন করে এনসিপির অনুকূলে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ করবে।