আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের নিরাপত্তা বাড়াতে চারটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে দুটি গাড়ি ও দুটি বুলেটপ্রুফ মিনি বাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে প্রথম অনুমতি দেওয়া হয় একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার। এরপর অক্টোবরের শুরুর দিকে আরেকটি বুলেটপ্রুফ বাস কেনার অনুমোদন মেলে। বিএনপি সূত্র বলছে, জাপান থেকে এসব গাড়ি আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বিএনপির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর জানিয়েছেন, নির্বাচনী সময় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান মাঠে সক্রিয়ভাবে প্রচারে নামবেন। এই সময়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমতি দেওয়া বিরল ঘটনা। সাধারণত এ ধরনের অনুমতি দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলকে।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) জানায়, জাপান, কানাডা ও জার্মানি বুলেটপ্রুফ গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রগামী। নব্বইয়ের দশকে ও ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার জন্যও বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়েছিল জাপান থেকে।
বারভিডার সভাপতি আবদুল হক জানান, বেসরকারিভাবে কেউ বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানি করতে পারেন না। সরকারের অনুমোদন লাগবেই। প্রতিটি গাড়ির দাম প্রায় ২ লাখ ডলার, শুল্কসহ মোট ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২২ কোটি টাকার মতো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক সূত্র জানায়, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত গত জুনে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের ব্যবহারের জন্য প্রথম আবেদন করেন। পরবর্তীতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ বাসের আবেদনও করা হয়।
এদিকে, বিএনপি অতিরিক্ত নিরাপত্তার অংশ হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদনও করেছে। আবেদনপত্রে একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের অনুমতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা এখনো বিবেচনায় রয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারের সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান হামলার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আক্রমণ বা সম্ভাব্য নাশকতার আশঙ্কা বিবেচনায় মন্ত্রণালয় বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনাপত্তি দেয়।
২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে থাকা তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি নির্বাচনে সরাসরি অংশ নেবেন বলেও ইঙ্গিত দেন। বিএনপি নেতারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৫ সালে তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনাও তাদের এই নিরাপত্তা উদ্যোগের অন্যতম কারণ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে বিএনপি নেতৃত্বের নিরাপত্তা জোরদার করাই এখন দলের অগ্রাধিকার।