মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তহবিল সংকট দেখা দেওয়ায় আগামী ৯ মাসের মধ্যে অন্তত ১,৩১৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
১৫ শতাংশ বাজেট ছাঁটাইয়ের আওতায় আপৎকালীন পরিকল্পনা হিসেবে পাঁচটি মিশন থেকে এসব শান্তিরক্ষী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গত ১৪ অক্টোবর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগের মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স দপ্তর (ওএমএ) নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠায়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চলমান অর্থসংকটের কারণে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ১৫ শতাংশ বাজেট হ্রাসের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এটি সরাসরি জনবল কমানোর নির্দেশ নয়, তবু বাজেট সংকোচনের ফলে মাঠপর্যায়ে শান্তিরক্ষীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠি অনুযায়ী, দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ মিশন ইউএনমিস থেকে ৬১৭ জন, মধ্য আফ্রিকার মিনুসকা মিশন থেকে ৩৪১ জন, সুদানের আবেই অঞ্চলের ইউনিসফা মিশন থেকে ২৬৮ জন, কঙ্গোর মনুসকো মিশন থেকে ৭৯ জন এবং পশ্চিম সাহারার মিনুরসো মিশন থেকে ৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে ফেরত আনা হবে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তটি মূলত চলমান আর্থিক সংকটের কারণে নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় পরিবর্তন হলে এবং তা বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেললে দ্রুত জানানো হবে বলেও স্থায়ী মিশনকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
এর আগে ৯ অক্টোবর এএফপি জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান কমে যাওয়ায় জাতিসংঘ বিশ্বের নয়টি অঞ্চলের শান্তিরক্ষা মিশনে এক-চতুর্থাংশ বাহিনী কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মোট বাজেট ৫৪০ কোটি ডলার হলেও যুক্তরাষ্ট্র সেখানে আগের ১৩০ কোটি ডলারের পরিবর্তে দিচ্ছে মাত্র ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।
বর্তমানে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তৃতীয় শীর্ষ প্রেরণকারী দেশ। ১৯৮৮ সালে ‘নীল হেলমেট’ পরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা যাত্রা শুরু হয়। এখন ১০টি দেশ বা স্থানে ৪৪৪ নারীসহ মোট ৫ হাজার ৬৯৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন (৩১ আগস্ট পর্যন্ত হিসাব)।
গত ৩৫ বছরে বিশ্বশান্তি রক্ষায় প্রাণ দিয়েছেন ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী, আহত হয়েছেন অন্তত ২৫৭ জন। আইএসপিআর জানায়, এই সময়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ৪৩টি দেশ ও স্থানে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি সদস্য শান্তিরক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুলিশ। এরপর থেকে বিশ্বের ২৪টি দেশের ২৬টি মিশনে অংশ নিয়েছেন পুলিশের ২১ হাজার ৮১৫ জন সদস্য। দায়িত্ব পালনকালে এখন পর্যন্ত ২৪ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
