চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০২ জন নিহত ও ৯৬৪ জন আহত হয়েছেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দেশের সড়ক ব্যবস্থার এই ভয়াবহ চিত্র।
সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেপ্টেম্বরে ৫০৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৯১টি দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল মোটরসাইকেল—এতে প্রাণ গেছে ১৯৯ জনের, আহত হয়েছেন ১৮৮ জন। নিহতদের বড় অংশই তরুণ কর্মজীবী।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এখানে ১২৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২২ জন ও আহত ২১৬ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৯২টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯৬ জন, রাজশাহীতে ৬৩টি ঘটনায় নিহত ৫৯ জন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে ২২টি ঘটনায় ২৭ জন মারা গেছেন ও ৪৭ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনায় জড়িত ৭৭২টি যানবাহনের মধ্যে ২৯ দশমিক ০১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২ দশমিক ০২ শতাংশ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বাস, এবং ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। এছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা ও লেগুনার সংখ্যা মিলিয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট দুর্ঘটনার ৪৮ দশমিক ৮০ শতাংশ ঘটেছে গাড়ি চাপায়, ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষে, আর ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে। এ ছাড়া ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ অন্যান্য কারণে, আর চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ও ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে।
স্থানভেদে দেখা যায়, ৪৫ দশমিক ০৩ শতাংশ দুর্ঘটনা জাতীয় মহাসড়কে, ২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ ফিডার রোডে, আর ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ ঢাকায় সংঘটিত হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির বিশ্লেষণে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অন্যতম কারণ হলো বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক এবং অব্যবস্থাপনা। সংগঠনটির দাবি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন উদ্যোগ যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনার হার আরও বেড়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনা শুধু প্রাণহানি নয়, বহু পরিবারকে অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছে। তাই দুর্ঘটনা রোধে কঠোর ট্রাফিক আইন প্রয়োগ, চালকদের প্রশিক্ষণ, সড়কের মানোন্নয়ন এবং যানবাহন নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
সংগঠনের ভাষায়, “সড়ক এখন রক্তাক্ত বাস্তবতার নাম। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর এই মিছিল আরও দীর্ঘ হবে।”