মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ জাতীয়

দেশজুড়ে টানা বর্ষণ, আরও কত দিন থাকতে পারে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর


প্রকাশ :

বাংলাদেশের আকাশজুড়ে এখন ঘন কালো মেঘ। টানা বৃষ্টির কারণে সারা দেশে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে এ বৃষ্টিপাত আরও অন্তত এক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশব্যাপী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বৃষ্টি চলতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ থেমে গিয়ে আবার হঠাৎ বাড়তে পারে। অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবহাওয়া অস্থির থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি সরে গিয়ে বর্তমানে ভারতের তেলেঙ্গানা ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বিস্তারও দীর্ঘ হয়ে ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল পেরিয়ে আসাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সমগ্র অঞ্চলের ওপর বৃষ্টিপাতের চাপ বেড়েছে।

আজ রোববার সকালে প্রকাশিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ও বজ্রঝড় হতে পারে। এসব অঞ্চলের কিছু জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

মেট অফিস জানিয়েছে, অতি ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নগরীতে সাময়িক জলাবদ্ধতাও দেখা দিতে পারে।

বৃষ্টির কারণে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। ঢাকায় বাতাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বইছে। আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ৯০ শতাংশ।

সূর্যাস্ত-সূর্যোদয়ের তথ্য অনুযায়ী, আজ রবিবার ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে নগরাঞ্চলে পানি জমে জনভোগান্তি বাড়তে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাঙামাটিতে ৮৭, সন্দ্বীপে ৮০ এবং তেঁতুলিয়ায় ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

তাপমাত্রার হিসাবে, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন সিলেটে ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

টানা বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সড়কে পানি জমে যানজট তৈরি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবে যাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছেন। রিকশা ও ভ্যানচালকরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে যাত্রী কমে গেছে, ফলে আয়ও কম হচ্ছে। কৃষকরা একদিকে বৃষ্টিকে ফসলের জন্য আশীর্বাদ মনে করলেও অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন।

মৌসুমি বৃষ্টির এ ধারাবাহিকতায় একদিকে জনজীবনে ভোগান্তি বাড়লেও অপরদিকে কৃষিজমিতে পানির জোগান বেড়েছে। তবে অতি ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পাহাড়ি ঢল ও ভূমিধসের পাশাপাশি শহরে জলাবদ্ধতা বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে।