বরিশালের মুলাদী উপজেলায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে দুই ভাই মিলে তাদের এক ভাইকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে চোখ উপড়ে ফেলেছে। ভয়াবহ এ ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) গভীর রাতে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবেরচর গ্রামের ব্যাপারী বাড়িতে। তবে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয় পরদিন শনিবার রাতে। এরপর ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
আহত রিপন ব্যাপারীকে প্রথমে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং পরে শেবাচিম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকার জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্তরা হলেন ভুক্তভোগীর মেজ ভাই রোকন ব্যাপারী ও ছোট ভাই স্বপন ব্যাপারী।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ২৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজন মিলে একজনকে মাটিতে চেপে ধরে আঙুল দিয়ে চোখ উৎপাটন করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ঢাকায় বসবাসকারী রিপন বিভিন্ন সময়ে চুরি, ছিনতাই ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও স্বর্ণালংকার সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ও ৪০ ভরি স্বর্ণ পরিবারের কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন। প্রায় তিন মাস আগে সেই টাকা ও স্বর্ণ ফেরত চাইতে গিয়ে দুই ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়ান রিপন। একাধিক সালিশ বৈঠকের পরও সমাধান হয়নি।
গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকা থেকে বাড়ি এসে সন্ধ্যায় ফের টাকা চাইলে দুই ভাইয়ের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে বাবা আশেদ ব্যাপারী ক্ষিপ্ত হয়ে রিপনকে মারধর করেন এবং চোখ উপড়ে ফেলার নির্দেশ দেন। বাবার নির্দেশেই মেজো ভাই রোকন ও ছোট ভাই স্বপন নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে রিপনের দুই চোখ উপড়ে ফেলে।
রিপনের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। প্রথমে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও পরে শেবাচিম হয়ে ঢাকার জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়।
আহত রিপন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ঢাকায় মাদক ব্যবসার পাশাপাশি স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসাও করতেন। বাবাকে তিনি ৩৫ লাখ টাকা ও ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার দিয়েছিলেন। সেই সম্পদ ফেরত চাইতেই বাবার নির্দেশে ভাইয়েরা তার চোখ উপড়ে ফেলেছে। তিনি ভাইদের মধ্যে সেজো। তিনি ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত রোকন ও স্বপন অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, কে বা কারা রিপনের চোখ তুলেছে সে বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। মুলাদী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ বলেন, ঘটনার পর অভিযুক্তরা পালিয়েছে। এখনো কোনো মামলা হয়নি, তবে তদন্ত চলছে।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার শরীফুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরেই এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। বাবা আশেদ ব্যাপারীর প্ররোচনায় দুই ছেলে মিলে সেজ ছেলে রিপনের চোখ উৎপাটন করেছে। তিনি আরও বলেন, “এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি, তবে পুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”