মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ জাতীয়

রংপুর প্রেসক্লাবে অবৈধ সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা বহাল


প্রকাশ :

রংপুর প্রেসক্লাবে প্রশাসকের মাধ্যমে অবৈধভাবে সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞার রায় বহাল রেখেছে আদালত। উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তি-তর্ক ও প্রমাণাদি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে রংপুর সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক ফারহানা খান এ রায় দেন। আদালতের এ রায়ে সাংবাদিকরা সন্তোষ প্রকাশ করে মনে করছেন, প্রেসক্লাব ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল।

মামলা ও প্রেসক্লাব সূত্রে জানা যায়, রংপুর প্রেসক্লাব একটি পেশাজীবী সংগঠন হলেও রহস্যজনকভাবে ৩৩ বছর আগে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রেসক্লাবের রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হয়। এরপর নিজস্ব গণতন্ত্রে পরিচালিত হলেও প্রেসক্লাব আর কখনো রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করেনি, এমনকি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকেও কখনো নবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়নি।

গণঅভ্যুত্থানের পর কিছু বিতর্কিত ও অপসাংবাদিক এবং প্রেসক্লাব থেকে দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃতরা অবৈধভাবে সদস্যপদ নেওয়ার চেষ্টা চালায়। পরিকল্পিতভাবে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে প্রেসক্লাবে প্রশাসক নিয়োগ করায়। এ ঘটনায় প্রেসক্লাব কমিটি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করে।

প্রশাসক দায়িত্ব পাওয়ার পর অতিউৎসাহী হয়ে প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে গত ১৩ মে সাধারণ সদস্য অন্তর্ভুক্তির নোটিশ জারি করেন। এতে প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন গঠনতন্ত্রের শর্তাবলী উল্লেখ করা হয়। অথচ পরবর্তীতে সদস্যদের সম্মতিক্রমে ও আইনানুগ প্রক্রিয়ায় একাধিকবার গঠনতন্ত্র সংশোধন হয়েছে। পরে প্রশাসক ৮ জুলাই অবৈধভাবে সদস্য অন্তর্ভুক্তির খসড়া তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিলে প্রেসক্লাব কমিটি বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে এবং অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চায়।

এর প্রেক্ষিতে আদালত ৯ জুলাই প্রশাসককে নোটিশ প্রদান করে কেন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেওয়া হবে না, তা সাত দিনের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ১৪ জুলাই নোটিশ প্রাপ্তির পরও প্রশাসক কোনো লিখিত আপত্তি দাখিল করেননি। ফলে আদালত ২৪ জুলাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় প্রশাসক আপিল করলে ২১ আগস্ট উভয় পক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেন। পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট আদালত পূর্বের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসকের অবৈধভাবে সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আমরা আদালতে আবেদন করেছিলাম। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে প্রশাসককে শোকজ করেছিলেন। কিন্তু প্রশাসক শোকজের কোনো জবাব দেননি। আদালত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন। প্রেসক্লাব নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাথে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় সদস্য নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা গঠনতন্ত্রবহির্ভূতভাবে প্রেসক্লাব ধ্বংসের চক্রান্ত প্রতিহত করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “প্রেসক্লাবে জুলাই বিপ্লব, শেখ হাসিনার অপশাসন, রংপুরের ফ্যাসিস্টদের অপকর্ম—এসবের বহু নথি সংরক্ষিত আছে। সাংবাদিকদের অভিযোগ, প্রশাসক সদস্যদের বের করে দিয়ে এসব নথি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। প্রেসক্লাব নিয়ে খেলা করলে রংপুরবাসী তা মেনে নেবে না। তাই অবিলম্বে প্রেসক্লাবের দায়িত্ব নির্বাচিত কমিটির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।”

বাদী পক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহে আলম বলেন, “প্রশাসকের অবৈধভাবে সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টা আদালত ফুল হেয়ারিংয়ে খারিজ করেছেন। এতে প্রতীয়মান হয়, প্রেসক্লাব ন্যায়বিচার পাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবেই। প্রেসক্লাব বন্ধ করে যারা অবৈধভাবে দখল করেছে, তারাই আসল অবৈধ।”