মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ জাতীয়

স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানিপণ্যে নিষেধাজ্ঞা, উদ্বিগ্ন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা


প্রকাশ :

বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দরের রপ্তানিকারকেরা। এ স্থলবন্দরের (বুড়িমারী) বিপরীতে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও শত শত শ্রমিকেরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।  

উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা বৃহত্তর জনস্বার্থে এ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে দুই দেশের সরকারকে আলোচনার অনুরোধ করেছেন।  

এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্য না নেওয়ায় সোমবার (১৯ মে) আরো ৫ টি বিস্কুটের গাড়ি ও বর্জ্য তুলা-সুতার ১৭ টি গাড়ি এ স্থলবন্দরে এসে আটকে গেছে। এর আগে গত ১৮ মে ২০ টি বিভিন্ন পণ্যের গাড়ি আটকে যায়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের এসব রপ্তানিপণ্যের গাড়ি এ স্থলবন্দরে আটকে থাকায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা। বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ টি গাড়ি রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতে যায়।  

অপরদিকে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাদের দেশের সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ থেকে খাদ্যদ্রব্য, পোষাক, তুলা-সুতা, প্লাস্টিক সামগ্রীসহ অন্যান্য পণ্য সে দেশে আমদানি করতে পারছে না আমদানিকারকেরা। এ কারণে ওই স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেছে। এখানকার চারটি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রায় ১২ শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত দুই দিন ধরে পণ্য বোঝাই ও খালাস করতে না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শত শত শ্রমিক। ব্যবসা সচল রাখার দাবিতে গত ১৮ মে এ স্থলবন্দরের আইএনটিইউসি নামে একটি শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা মিছিল করেছে। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এখানকার আমদানিকারকেরা।   

এ ব্যাপারে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানিকারক মেসার্স এসি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী অজয় প্রসাদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় পণ্য যদি না আসে তাহলে এ স্থলবন্দরের প্রায় ১২ থেকে ১৩ শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, এ স্থলবন্দরে সরকারি কোনো ওয়্যার হাউজ/পণ্য রাখার গোডাউন নেই; যারা পণ্য রাখার গোডাউন ভাড়া দিয়েছেন তাঁদেরও ক্ষতি হবে। পশ্চিবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজস্ব আদায় হয় চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর থেকে তবে দেশের স্বার্থে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এ ব্যাপারে তো আমাদের বলার কিছু নেই। এটা সরকারের ব্যাপার। আমদানিকারকদের ক্ষতি তো অবশ্যই হবে। আমাদের অন্য লাইনে কনভার্ড হতে হবে নিজেদেরকে।’  

সূত্র জানায়, গত ১৭ মে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) আইনের ধারা প্রয়োগ করে আমদানি ও বন্দর সীমাবদ্ধতা নীতি ২০২৫-২৬ কার্যকর করে। জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে রেডিমেড গার্মেন্টস পোষাক, ফল/ফলের স্বাদযুক্ত কার্বনেট পানীয় (জুস), প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আইটেম স্ন্যাকস, চিপস, বিস্কুট ও মিষ্টান্ন, প্লাস্টিক সামগ্রী, পিভিসি জাতীয় পণ্য এবং গার্মেন্টসের বর্জ্য তুলা-সুতা এবং কাঠের আসবাবপত্র বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। 

বাংলাদেশের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের মাধ্যমে সেদেশে (ভারতে) বাংলাদেশি প্রাণ, সজীব গ্রুপের ফলের স্বাদযুক্ত কার্বনেট পানীয় (জুস), প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আইটেম স্ন্যাকস, চিপস, বিস্কুট ও মিষ্টান্ন, আরএফএলের প্লাস্টিক সামগ্রী, পিভিসি জাতীয় পণ্য এবং গার্মেন্টসের বর্জ্য তুলা-সুতা রপ্তানি করা হয়। কিন্তু ভারত সরকার তাদের দেশে এসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এ স্থলবন্দরে ১৮ মে ২০ টি ও ১৯ মে সোমবার ২২ টি রপ্তানিপণ্যবোঝাই গাড়ি আটকে যায়। এতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারককে প্রতিটি গাড়ির ভাড়া ও চালকদেরকে নির্দিষ্ট টাকা ক্ষতিপূরণ গুণতে হচ্ছে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পড়েছে বিপাকে। গত দুই দিন ধরে নিরাপদে পণ্য রাখা এবং চালকদের থাকা, খাওয়ার দেখভাল করতে হচ্ছে। 

নরশিংদীর ঘোরাশাল থেকে প্রাণের লিচু ড্রিংকসের গাড়ি নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরে আসা চালক গোলাম হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ করে শুনি এসব পণ্য আর ভারত নিবে না। দুই দিন ধরে গাড়ি নিয়ে পড়ে আছি। থাকা-খাওয়া নিয়ে খুব সমস্যায় আছি।’  

বুড়িমারী স্থলবন্দরের রপ্তানিকারক মেসার্স বন্ধু টেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী শামীম হোসেন বলেন, ‘ভারতের হঠাৎ নিষেধাজ্ঞার কারণে বুড়িমারী স্থলবন্দরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বর্জ্য তুলা-সুতা, খাদ্যদ্রব্য, পোষাক ও অন্যন্য সামগ্রীর গাড়ি এনে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছি। শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও উভয় দেশের বৃহত্তর জনস্বার্থে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে দুই দেশের সরকারকে আলোচনা করতে অনুরোধ করছি।’   

বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, ‘পণ্য নিবেনা হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বন্ধ করা ব্যবসায়ী নীতির পরিপন্থি। এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে ফেলেছে।’