১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানের নরপশু ইয়াহিয়ার হানাদার বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ, নিরপরাধ, ঘুমন্ত মানুষের উপর পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ পরিচালনাসহ অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, নিপীড়ন, নির্যাতন, মা বোনদের সম্ভ্রমহানি করে। এরূপ হত্যাযজ্ঞের প্রতিরোধে স্বাধীনতা ঘোষণার পর সুদীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, কোটি মানুষের অপরিসীম ত্যাগ, লাখো শহীদের আত্মদান, মা বোনদের সম্ভ্রমহানী, অকুতোভয় সশস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ, রণনৈপুণ্য, সর্বোপরি তৎকালীন ভারত সরকার, সেনাবাহিনী ও জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় ও সমর্থনে মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে রক্তখচিত পতাকায় সমৃদ্ধ হয়ে রক্তস্নাত বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ছিল গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, শোষণ, বঞ্চনা, জুলুম, বৈষম্য, ও প্রভুত্বের অবসান, অর্থনৈতিক মুক্তি, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। সুদীর্ঘ ৫৫ বছরে আমরা স্বাধীনতার চেতনা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তার অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, প্রভুত্ব, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন,ব্যাংক ডাকাতি ও অন্যান্য জালিয়তির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ ও সম্পদ পাচার।সর্বোপরি স্বাধীনতা বিরোধী অব শক্তি ও জঙ্গিদের অপতৎপরতা। এজন্য মূলত দায়ী হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠাকারী দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অর্থাৎ রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ,ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। কলুষিত বিচার ব্যবস্থা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা,বিচারহীনতার সংস্কৃতি। অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা ও কতিপয় বিচারকের দলীয় দাস ও আজ্ঞাবহ কর্মচারী হিসেবে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা। এই দুর্নীতিপরায়ণ ত্রিশক্তি অর্থাৎ রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা ব্যবসায়ীরা মুখে শহীদের কথা,আত্মত্যাগের কথা, মা বোনদের, সম্ভ্রমহানীর, দুর্নীতির ও মানুষের ত্যাগ তিতিক্ষার কথা বললেও এরা সর্বদাই নিজেদেরকে রাষ্ট্রের মালিক ও দন্ড মুন্ডের কর্তা হিসেবে নিজেদেরকে মনে করে। এরা সর্বদাই থেকেছে আইনের শাসনের বাইরে। তা না হলে একটি স্বাধীন রক্তস্নাত বাংলাদেশের ২৮ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে এরা, এদের সন্তান ও সহযোগীরা কিভাবে বাংলাদেশ ও বিদেশে অবস্থান করছে। এদের ফাঁসির হচ্ছে না কেন? এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারি, দুর্নীতিবাজ, নরপশু ও তাদের সন্তানেরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে। অপরদিকে স্বাধীনতা কামী মানুষ, শহীদ ও আত্মত্যাগী পরিবার সদস্যরা, সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, বীরঙ্গনা মহিলা সহ কৃষক, শ্রমিক, মজুর মেহনতি মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। কিন্তু দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতির পরিবর্তন হয় না। দুর্নীতিবাজরা জেলে যায়। রাজনৈতিক কারণে জেল থেকে ছাড়া পায়।আবারো দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়। এরূপ দুর্নীতির রিলেরেস চলছে রক্তস্নাত বাংলাদেশে।এই দুর্নীতিবাজদের কবল থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিচারপতি আব্দুর রউফ জীবদ্দশায় বলেছিলেন, দেশের সকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চাবুকের আইন প্রবর্তন পূর্বক দুর্নীতিবাজদের প্রকাশ্যে চাবুকের ঘা মারা না হলে দেশ থেকে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের নির্মূল করা যাবে না।
২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার,বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।