দেশের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে বন্ধ আছে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ১৭৫টি আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনের প্রায় এক লাখ যাত্রী যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। উপায়ে বাড়তি টাকা খরচ করে অনেক কষ্টে গন্তব্যে ছুটছেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে মূল বেতনের সাথে রানিং অ্যালাউন্স যোগ পেনশন এবং আনুতোষিক-সুবিধা দেয়ার দাবিতে ট্রেন পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে রানিং স্টাফ গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন যোগাযোগ।সোমবার মধ্যরাতের আগে যেসব ট্রেন ছেড়েছিল ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে।ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশনগুলোতে শত শত যাত্রী এসে ফিরে যাচ্ছেন।
রংপুর স্টেশনে আসা বুড়িমাড়ীগামী রাশেদ রহমান জানান, এই ট্রেনে করেই চাকরি জীবনের ২৩টি বসন্ত করলাম। সকালে গিয়ে অফিস করে আবার রাতে ফেরা। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকি। আরামে যাতায়াত করি।আজ প্লাটফর্মে এসে শুনি ট্রেন বন্ধ। দাবি দাওয়া থাকবে।রাষ্ট্রীয় একটি বাহন এভাবে বন্ধ করাটাকে ষড়যন্ত্রের অংশ মনে করি।যাত্রীদের জিম্মি করে এভাবে দাবি আদায় অযৌক্তিক এটা সরকারের প্রতি রাষ্ট্রের কর্মচারীদের একটা চ্যালেঞ্জ।অবিলম্বে ট্রেন চালুর দাবি জানান।এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রানিং স্টাফরা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগ প্রাপ্ত এলাকায় হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে হলে আট ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময় কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেয়া হয় যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত। বিগত সরকারের আমলে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়।এছাড়াও বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সাথে পাওয়া কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টি বাদ দেয়া হয়।এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা।
মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন তারা।কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।তবে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেল মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ মজিবুর রহমান জানান, ১৬০ বছর ধরে চলা নিয়ম আওয়ামী লীগ সরকার এক চিঠিতেই বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ওই সময়ও আন্দোলন করেছি। দাবি না মেনে আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে রেলভবনে রেল কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছি। বৈঠকে আমাদের মাইলেজ, রানিং অ্যালাউন্সের কোনো দাবি পূরণের আশ্বাস মেলেনি। তাই রাত ১২টা থেকে কর্মবিরতিতে আছি। এ কারণে মধ্যরাত থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের সুপারেনটেনডেন্ট শংকর রায় গুহ জানান, সোমবার রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন ছেড়েছিল। সেগুলো গন্তব্যে ঠিকভাবে পৌঁছেছে। তাতে কোনো অসুবিধা হয়নি। সোমবার ১২টার পর থেকে ট্রেন চলছে না। স্টেশনে এসে যাত্রীরা ভিড় করছেন। যাদের অগ্রিম টিকেট কাটা ছিল সে ব্যপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক লিয়াকত শরীফ খান জানান,ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে আছেন।বিষয়টি আমরা টাইম টু টাইম ঢাকাকে অবহিত করছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক মামুনুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন পশ্চিমাঞ্চলে ১৭৫টি ট্রেন আপডাউন হয়। এরমধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন ৬২টি। বাকিগুলো লোকাল ও মেইল। প্রতিদিন ৭০ হাজারেও বেশি যাত্রী পশ্চিমাঞ্চল রুট দিয়ে যাতায়াত করে। কর্মবিরতির কারণে এসব যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা কোনো সুরাহা হয়নি।