ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপকে বিবেচনায় রেখে তেহরান তাদের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম স্থগিত করবে না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রোগ্রাম নিয়ে কোনো রকম আলাপ-আলোচনা বা সমন্বয় করার ইচ্ছা থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) কাতারি সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক সাক্ষাৎকারে আরাগচি এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেছিলেন, তাদের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য নির্দেশ করে — এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ কাটাতে তারা নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার অংশীদাররা যে শর্ত আরোপ করেছে সেগুলো তেহরান গ্রহণ করতে পারবে না; সেসব শর্ত “অসম্ভব ও অগ্রহণযোগ্য” বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
আরাগচি আরও জোর দিয়ে বলেছেন, তেহরান সরাসরি ওয়াশিংটনের সঙ্গে বসার ইচ্ছা রাখে না; তবে পরোক্ষ চ্যানেলে আলোচনার পথ খোলা থাকলে কোনো সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার ভাষ্য, “যুদ্ধের মাধ্যমেই তারা যা অর্জন করতে পারেনি, রাজনীতির মধ্যেও তা সহজে পাবেন না।”
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার প্রসঙ্গ টেনে আরাগচি জানান, তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রস্তুতি অবলম্বন করে রেখেছে। যদি ইসরায়েল ফের আক্রমণ করে, তাতে গঠনগতভাবে মূল্যবান কোনো অর্জন তার হবে না — বরং প্রতিউত্তর কঠোর হবে এবং ফল ভয়াবহ হতে পারে, এমনই সতর্কতা দিলেন তিনি।
তেহরানের এই কড়া অবস্থান আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই এসেছে। গত মাসে যুক্তরাজ্যসহ কিছু ইউরোপীয় দেশ ইরানের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে; তবু ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি শাসকদলে কোনো প্রকার দৃশ্যমান অনিশ্চয়তা দেখা যায়নি।
জাতিসংঘের পরমাণু তত্ত্বাবধায়ী সংস্থা আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ জুন ইরানের কাছে প্রায় ৪০০ কেজি ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। যদি এটি ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়, তাতে যুদ্ধোপযোগী অস্ত্র তৈরির পথ সহজতর হবে—এইই কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ বাড়ছে।
উল্লেখ্য, ১০ জুন রাফায়েল গ্রসির সাক্ষাৎকারের কয়েক দিন পর, ১২ জুন রাতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত স্থাপনা, বিজ্ঞানী ও প্রতিরক্ষা সংস্থাকে লক্ষ্য করে এক আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। প্রায় ১২ দিন বিস্তৃত সংঘাতের পরে ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আসে। ওই সংঘাতে তেহরানের বেশ কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইরানের কাছে থাকা ইউরেনিয়ামের কোন অংশ নষ্ট হয়নি।
সূত্র: আরটি ইন্টারন্যাশনাল, টাইমস অব ইসরায়েল