নেপালে পালিত হলো অনন্য এক উৎসব—‘কুকুর তিহার’। প্রভুভক্তি, আনুগত্য ও সাহসিকতার প্রতীক এই প্রাণীগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে প্রতি বছরই এই দিনে নেপালজুড়ে আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচি। পোষা কুকুর হোক বা সেনাবাহিনীর সার্ভিস ডগ—সবাইকে মালা, খাবার ও সিঁদুর দিয়ে সম্মান জানানো হয়।
গত সোমবার ছিল কুকুর তিহারের মূল দিন। সকাল থেকেই রাজধানী কাঠমাণ্ডুসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় কুকুরদের রাজকীয় আপ্যায়ন। কেউ ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছে, কেউ মাথায় টিকা দিচ্ছে, আবার কেউ দুধ, ডিম আর মাংস দিয়ে ভোজের আয়োজন করছে। পার্থক্য করা হয় না—পথের আশ্রয়হীন কুকুরদেরও একইভাবে সম্মান জানানো হয়।
হিন্দু ধর্মমতে, কুকুরকে মৃত্যুর দেবতা যমের দূত ও আত্মার পথপ্রদর্শক মনে করা হয়। সেই বিশ্বাস থেকেই শতাব্দী প্রাচীন এই উৎসবের সূচনা। তবে এখন এটি কেবল ধর্মীয় আচার নয়—মানুষ ও কুকুরের পারস্পরিক সম্পর্কের এক উজ্জ্বল উদযাপন।
কাঠমাণ্ডুতে নেপাল সেনাবাহিনীর ক্যানাইন ডিভিশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য প্যারেড। সেখানে সামরিক পোশাকে সজ্জিত কুকুরদের সামনে দাঁড়িয়ে সম্মান জানায় সেনাসদস্যরা।
নেপাল পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট ড. আর. সি. সাটিয়াল বলেন, “আমরা আমাদের কুকুরদের শুধুই আধ্যাত্মিক কারণে নয়, তাদের অবদানের জন্যও শ্রদ্ধা জানাই। তারা দেশের নিরাপত্তা ও উদ্ধার অভিযানের এক অপরিহার্য অংশ।”
বর্তমানে নেপালজুড়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হয়ে কাজ করছে শতাধিক প্রশিক্ষিত কুকুর। বোমা শনাক্তকরণ, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিদেশি পর্যটকেরা বলেন, অন্য দেশে কুকুর হয়তো শুধুই পোষা প্রাণী, কিন্তু নেপালে তারা পূজিত আত্মা—ভালোবাসা ও সম্মানের প্রতীক। স্থানীয়দের বিশ্বাস, যে ব্যক্তি কুকুরকে স্নেহ করে, যম তাকে আশীর্বাদ দেন এবং আত্মার শান্তি নিশ্চিত হয়।
এই দিনটিতে কুকুরদের চোখে যেমন আনন্দ, তেমনি ফুটে ওঠে এক ধরনের গর্ব—যেন তারা জানে, আজকের দিনটি শুধুই তাদের জন্য।