শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ সারাদেশ

কর্মকর্তাকে নিতে ৫ কিলোমিটার উল্টো পথে চলল ট্রেন রেলওয়েতে তোলপাড়, ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে লালমনিরহাট বিভাগ


প্রকাশ :

এক কর্মকর্তাকে নিতে গিয়ে ট্রেন উল্টো পথে চলেছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এমন নজিরবিহীন ঘটনাকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনটি উল্টো পথে চালানো হয় বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আব্দুল্লাহ আল মামুনের অনুমতি ছাড়া। অথচ রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ডিটিওর অনুমতি ছাড়া কোনো ট্রেন মুভমেন্ট সম্ভব নয়।

রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা অনুসারে, প্রধানমন্ত্রীও যদি নির্দেশ দেন, তবুও বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার অনুমোদন ছাড়া ট্রেন বিপরীত দিকে চালানো যায় না। কন্ট্রোল অফিস, চালক, গার্ড কিংবা স্টেশন মাস্টার— কেউই নিজস্ব সিদ্ধান্তে ট্রেন চালাতে পারেন না। ডিটিওর নিয়ন্ত্রণাধীন কন্ট্রোল অফিস থেকেই সব মুভমেন্ট অর্ডার ইস্যু করা হয়।

কিন্তু গত সোমবারের ওই ঘটনায় কোনো কন্ট্রোল অর্ডার বা মেমো অনুসরণ করা হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে— কে দিল ট্রেন পেছনের দিকে চালানোর নির্দেশ?

রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, উক্ত ট্রেন মুভমেন্টের বিষয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা বা সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা কেউই অবগত ছিলেন না। সবকিছু ঘটেছে কিছু কর্মচারীর নিজস্ব সিদ্ধান্তে।

সূত্রের দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার লক্ষ্য ছিল লালমনিরহাট বিভাগের ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফাকে ফাঁসানো। ঘটনাটি এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যাতে দোষ তার ওপর বর্তায়, যদিও এই মুভমেন্টে তার কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল না।

রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ট্রেন বিপরীত দিকে নেওয়ার ঘটনায় ট্রেন কন্ট্রোলার, চালক, গার্ড ও স্টেশন মাস্টার— সবাই দায়ী। কিন্তু বাস্তবে সমালোচনার মুখে পড়ছেন কেবল একজন কর্মকর্তা, যিনি আদৌ এই মুভমেন্টের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতাই রাখেন না।

পেছনের কাহিনি: অনিয়ম ধরা পড়ায় ক্ষোভ। সম্প্রতি পঞ্চগড়ে বিসি ওয়াগনে বালু পরিবহনে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদের নির্দেশনায় অতিরিক্ত দুই লাখ ছিয়ানব্বই হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়।

তদন্তে উঠে আসে, স্টেশন মাস্টারসহ কিছু স্টাফ অতিরিক্ত বালু পরিবহনের সুবিধা দিয়ে প্রতি ট্রিপে প্রায় এক লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করত। এই অনিয়ম ধরা পড়ার পর তাদের অতিরিক্ত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়, যা থেকেই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

এদিকে, স্টেশন মাস্টারদের দায়িত্ব পালনের নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আগে তারা ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা টানা দায়িত্ব পালন করতেন, যা এখন পরিবর্তন করে তিনজন থাকলে ১২ ঘণ্টা এবং দুজন থাকলে ২৪ ঘণ্টা করে দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে তাদের অতিরিক্ত সুবিধা কমে গেছে।

কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর অপরিচ্ছন্নতা ছিল দীর্ঘদিনের সমস্যা। বর্তমানে তা কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে। যাত্রীরা এখন সন্তোষ প্রকাশ করছেন। ফলে ক্লিনিং ঠিকাদারদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে।

এদিকে যাত্রী সন্তুষ্টি বাড়তে, লালমনিরহাট বিভাগের সব স্টেশনে এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দৃশ্যমান। ক্যাটারিং সার্ভিসের মান উন্নত হয়েছে, বালু পরিবহনে অনিয়ম বন্ধ হয়েছে। স্টেশন মাস্টারদের দায়িত্ব সুশৃঙ্খল হয়েছে, ট্রেন অ্যাটেনডেন্টদের অনিয়ম রোধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এই পরিবর্তনে সাধারণ যাত্রী সন্তুষ্ট হলেও, এক শ্রেণির কর্মচারী এতে ক্ষুব্ধ। সচেতন মহল মনে করছে, তারাই প্রশাসনবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকতে পারে।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে (ডিআরএম) ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা বলেন, “ট্রেনের উল্টো পথে চলার ঘটনা নিঃসন্দেহে গুরুতর বিষয়। তবে প্রাথমিক তথ্যে মনে হচ্ছে, এটি প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের মুভমেন্ট কেবলমাত্র কন্ট্রোল অফিসের নির্দেশে সম্ভব। আমি বিষয়টি ইতোমধ্যে উচ্চ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “রেলওয়ের ভাবমূর্তি ও যাত্রী নিরাপত্তা রক্ষায় কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।”