রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রশাসন জুলাই আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনা ৯ মাস পর শহীদ আবু সাঈদকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। বুধবার(৭ মে) তাজহাট মেট্রোপলিটন থানায় করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এ মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিষ্টার মোঃ মোক্তারুল ইসলাম ও রাফিউল হাসান রাসেল কে(৭ মে) বুধবার রাতে গ্রেফফতার করেছে তাজহাট থানা পুলিশ।মামলায় ৭১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১‘শ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের ৩৬ জন, দুজন শিক্ষক, ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ আটজন ও বহিরাগত ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।মামলায় ধারা উল্লেখ করা হয়েছে দন্ডবিধি আইনের ১৪৩/১৪৭/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/১৩৪/৩৪ দন্ড বিধি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক শওকাত আলী (৭ মে )রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিপীড়ন মূলক একটি মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ১১, ১৫ ও ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা হামলা চালান।১১ জুলাই শহীদ আবু সাঈদকে পোমেল বড়ুয়া চড়থাপ্পড় মারেন এবং মাসুদুল হাসান হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরেন। এ ছাড়া ১৬ জুলাই পুলিশ, বহিরাগতসহ অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১‘শ জন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, লাঠি-সোঁটা, লোহার রড, হাত বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র পিস্তলসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পর্যায়ক্রমে হামলার কথা উল্লেখ করা হয়।
দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান, লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান তুফান, কর্মচারী আমির হোসেন, সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশ, উপ-রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম, প্রক্টর অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, মাস্টার রোল কর্মচারী নুরনবী, নিরাপত্তা শাখার কর্মচারী নুর আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার (ডেসপাস) মোক্তারুল ইসলাম, সেমিনার সহকারী আশিকুন্নাহার টুকটুকি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাহবুবা আক্তার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের মাহবুবার রহমান বাবু, প্রক্টর অফিসের মোঃ আপেল, সাবেক ভিসির পিএস আবুল কালাম আজাদ।বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর, সহ-সভাপতি বিধান বর্মণ, গ্লোরিয়াস ফজলে রাব্বী, তানভির আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক শাহিদ হাসান সিদ, সহসভাপতি মমিনুল হক, আখতার হোসেন, শাহীন ইসলাম।তাজহাট থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিকরুল মাহবুব শোভন, যুবলীগ কর্মী শামিম হাসান, শাহারিয়ার নয়ন, আহসান হাবিব লালন, আল আমিন, ছাত্রলীগ কর্মী ইশাক রিজন, সায়ির বিন আশরাফ আনন্দ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আতিকুল বারী জামিন, জাকির মুসা, রংপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিক বনি, আওয়ামী লীগ কর্মী মোঃ নয়ন, তাজহাট থানার যুবলীগের সাধারন সম্পাদক শিপন।এ ছাড়াও তৎকালীন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মোঃ আল ইমরান হোসেন, আরিফুজ্জামান, তাজহাট মেট্রোপলিটন থানার সাবেক ওসি রবিউল ইসলাম,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাঁড়ি ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায়, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, আমির আলী, উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ উপ-কমিশনার শাহানুর আলম পাটওয়ারী।
নগরীর তাজহাট মেট্রোপলিটন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মোঃ শাহ আলম সর্দার রাত ১১ টায় ইত্তেফাককে বলেন,থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। যার নম্বর ৬। তারিখ ৭মে ২০২৫। এ মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিষ্টার মো মোক্তারুল ও রাফিউল হাসান রাসে কে গ্রেফফতার করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। গ্রেফতার কৃতদের বৃহস্পতিবার আদালতে চালান দেয়া হয়েছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ হারুন অর- রশিদ বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন, প্রতিবেদন তৈরি, লিগ্যাল অ্যাডভাইজার নিয়োগসহ প্রক্রিয়া গুলো করতে সময় লাগায় মামলা দায়ের করতে দেরি হয়েছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ৩৬ জন শিক্ষার্থী, শিক্ষক দুজন, কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৩ জন, তৎকালীন পুলিশ প্রশাসনের ৮ জন ও বহিরাগত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
