লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় নিজেকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎকারী সাইদুর রহমান ওরফে বিপ্লব (৪৫) নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (৭ মে) রাতে উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ী গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) কালীগঞ্জ থানা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক। তিনি জানান, ধৃত সাইদুর রহমান নিজেকে কখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, কখনো খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক কিংবা জেলা প্রশাসক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
ওসি আরও জানান, সাইদুর রহমানের প্রতারণার ইতিহাস এক দশকেরও বেশি সময়ের। ২০১৪ সালে একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগে তাকে জনতা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তখনও তিনি নিজেকে জেলা প্রশাসক পরিচয় দিয়েছিলেন। সে ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় তার কারাদণ্ড হয়। কিন্তু কারামুক্তির পর সে পুনরায় একই ধরনের প্রতারণা চালিয়ে যায়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানাতে পায়, সাইদুর রহমান একটি সুসংগঠিত প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বেকার তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করত। চাকরির লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অগ্রিম ‘নিয়োগ খরচ’ বা ‘ফাইল প্রসেসিং ফি’ নামে লাখ লাখ টাকা নেয়া হতো।
তিনি নিজের ঠোঁটছোঁয়া কথায় সহজ-সরল মানুষকে বিশ্বাস করিয়ে মোবাইল নম্বর ও ভুয়া নিয়োগপত্র সরবরাহ করতেন। ভুক্তভোগীদের অনেকে জীবনের সব সঞ্চয় হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
ওসি সেলিম মালিক বলেন, “সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে দেশের সাতটি থানায় অন্তত আটটি মামলা রয়েছে, যেগুলো বিচারাধীন। এসব মামলার মূল অভিযোগ—সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ।”
গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েক মাস ধরে কালীগঞ্জ থানা-পুলিশ সাইদুরের গতিবিধির ওপর নজরদারি শুরু করে। অবশেষে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, ভুয়া পরিচয়পত্র ও একাধিক সিম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। চক্রটির অন্যান্য সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি।