শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ অন্যান্য

বাংলাদেশে স্টারলিংকের পাঁচ মাসে গ্রাহক দুই হাজারের নিচে


প্রকাশ :

বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক কার্যক্রম শুরু করেছে পাঁচ মাস আগে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহক সংখ্যা এখনো দুই হাজারও হয়নি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্টারলিংকের গ্রাহক ছিল মাত্র ১ হাজার ৮৬২ জন, এর মধ্যে ১ হাজার ২৫১ জন আবাসিক ব্যবহারকারী।

ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের শীর্ষ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সরবরাহকারীদের একটি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই তারা বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। ৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলে বিষয়টি দ্রুত অগ্রসর হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৯০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মে স্টারলিংক বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা চালু করে।

প্রযুক্তিভিত্তিক গণমাধ্যম রেস্ট অব ওয়ার্ল্ড-এর তথ্যমতে, বর্তমানে স্টারলিংক বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে সক্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা দেয়। তুলনায় আফ্রিকার দেশগুলোতে তাদের বাজার দ্রুত বেড়েছে—কেনিয়ায় সেবা চালুর ২০ মাসে গ্রাহক ছাড়িয়েছে ১৭ হাজার, আর নাইজেরিয়ায় তা ৬০ হাজারের কাছাকাছি।

বাংলাদেশে ধীর অগ্রগতির কারণ নিয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, “স্টারলিংক যে মানের সেবা দিচ্ছে, তার তুলনায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনও হতাশাজনকভাবে কম।”

বিটিআরসি সূত্র জানায়, স্টারলিংক বর্তমানে কালিয়াকৈরে দুটি, যশোর ও রাজশাহীতে একটি করে গেটওয়ে স্থাপন করেছে। এছাড়া সৈয়দপুর, কক্সবাজার, সিলেট ও কুমিল্লায় নতুন গেটওয়ে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে ৮০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ নিয়েছে, যার মধ্যে ৩০ জিবিপিএস বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে নজরদারি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। বিটিআরসির সাম্প্রতিক সভায় জানানো হয়, আইনানুগ আড়িপাতার (লফুল ইন্টারসেপশন) জন্য স্টারলিংক যে মনিটরিং টুল দিয়েছে, তা প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে না। এই বিষয়ে জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ও স্টারলিংকের মধ্যে আলোচনা চলছে।

এ ছাড়া বিটিআরসি প্রতিষ্ঠানটিকে আরও নির্দেশ দিয়েছে—দেশীয় আইআইজি অপারেটরের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকসেবা ঠিকভাবে চলছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য আলাদা টুল সরবরাহ করতে। স্টারলিংক জানিয়েছে, এনটিএমসিকে দেওয়া একই টুল বিটিআরসিকেও দেওয়া সম্ভব, কিন্তু কমিশন মনে করছে, উভয় সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সেটি যথেষ্ট নয়।

স্টারলিংক বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ব্যান্ডউইডথ বিক্রির অনুমতি চেয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) ও ‘আনফিল্টারড আইপি’ সেবা চালুর অনুমোদনের জন্য আগস্টে আবেদন করেছে। কিন্তু বিটিআরসি জানিয়েছে, এই ধরনের বাণিজ্যিক অনুমোদনের বিধান বর্তমান নীতিমালায় নেই।

কমিশন আরও জানতে চেয়েছে, বিদেশি গ্রাহক বা রোমিং ব্যবহারকারীরা বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা ব্যবহার করছে কি না এবং তারা দেশের গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত কি না—এই বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন দিগন্ত খুললেও, স্টারলিংকের সেবা কত দ্রুত ও কতটা কার্যকরভাবে বিস্তৃত হবে—এখন সেটিই সময়ের অপেক্ষা।