রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ আন্তর্জাতিক

বিক্ষোভে লাখো মানুষের সমাগম লন্ডনে, সরকারের পদত্যাগ চান ইলন মাস্ক


প্রকাশ :

লন্ডনের কেন্দ্রীয় এলাকায় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) অভিবাসনবিরোধী বিশাল সমাবেশে যোগ দেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। ইংল্যান্ড ও ব্রিটেনের পতাকা হাতে তারা মিছিল করেন এবং কিছু সময় পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে দেখা যাওয়া সবচেয়ে বড় ডানপন্থি বিক্ষোভগুলোর একটি ছিল এটি।

মেট্রোপলিটন পুলিশের হিসাবে, কট্টর ডানপন্থি কর্মী টমি রবিনসনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ শীর্ষক এ কর্মসূচিতে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ অংশ নেয়। পাল্টা হিসেবে আয়োজিত ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’ সমাবেশে যোগ দেয় প্রায় ৫ হাজার মানুষ।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ট্রেন ও বাসে লন্ডনে আসেন। শুরুতে সমাবেশকে ‘বাকস্বাধীনতার উৎসব’ বলা হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই এটি রূপ নেয় বর্ণবাদী বক্তব্য আর মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণায়। অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে গিয়ে পুলিশ ব্যাপক হামলার শিকার হয়। লাথি-ঘুষি, বোতল, ফ্লেয়ারসহ নানা জিনিস ছোড়া হয় তাদের দিকে। এতে ২৬ জন পুলিশ আহত হন, যাদের চারজনের অবস্থা গুরুতর। ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনকে আটক করা হয়।

ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সমাবেশে যুক্ত হয়ে মার্কিন ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, “নিয়ন্ত্রণহীন অভিবাসনের কারণে ব্রিটেনের পতন দ্রুত হচ্ছে।” একই সঙ্গে জনগণকে সরকারের পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

মাস্কের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন ফরাসি কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিক এরিক জেমুর। তিনি অভিযোগ করেন, “দক্ষিণাঞ্চল ও মুসলিম দেশগুলো থেকে আসা মানুষ ইউরোপের জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।”

বিক্ষোভকারীরা অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত হোটেলগুলো ঘেরাও করে স্লোগান দেন এবং হাতে নেন ব্রিটেনের পাশাপাশি মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা। অনেককে দেখা যায় ট্রাম্প সমর্থকদের লাল ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ টুপি পরে। তারা প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে সরব হন এবং ‘অভিবাসীদের ফেরত পাঠাও’ স্লোগান তোলেন।

পরে মুসলিম ব্রাদারহুড, ইসলামিক স্টেট ও ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা গেলে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা, এতে জনতার মধ্যে উল্লাস দেখা দেয়।

টমি রবিনসন—যিনি আসলে স্টিফেন ইয়াক্সলে-লেনন—মঞ্চে উঠে ঘোষণা দেন, “ব্রিটেন জেগে উঠেছে, এই আন্দোলন আর থামবে না।” যদিও তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক রেকর্ড রয়েছে, তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে দাবি করেন।

এক সমর্থক স্যান্ড্রা মিচেল বলেন, “অবৈধ অভিবাসন এখনই বন্ধ করা জরুরি।” অপরদিকে পাল্টা সমাবেশে থাকা শিক্ষক বেন হেচিনের মতে, “ঘৃণা আমাদের বিভক্ত করছে, বরং সবাইকে স্বাগত জানালে দেশ আরও শক্তিশালী হবে।”

অভিবাসন এখন যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। দুর্বল অর্থনীতি নিয়েও জনমনে উদ্বেগ রয়েছে, তবে অভিবাসন বিতর্ক সেই আলোচনাকে ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি মানুষ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন, যা রেকর্ডসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।