সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ আন্তর্জাতিক

ভারতে শতাধিক পণ্যে দাম কমলো , চাঙ্গা হতে পারে অর্থনীতি


প্রকাশ :

ভারত সরকার এক বড় অর্থনৈতিক সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। দেশের ভোক্তাদের হাতে বাড়তি ক্রয়ক্ষমতা তুলে দেওয়া এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ানোর লক্ষ্যেই শতাধিক ভোগ্যপণ্য ও সেবার ওপর কর কমিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সাবান, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু থেকে শুরু করে ছোট গাড়ি, টেলিভিশন ও এয়ার কন্ডিশনারের মতো দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলো এবার কম দামে পাওয়া যাবে।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বুধবার জানান, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) কাউন্সিল দীর্ঘদিনের সমালোচনার মুখে থাকা জটিল কর কাঠামোকে সরলীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতদিনের চার স্তরের জিএসটি কাঠামো কমিয়ে এখন দুই স্তরে আনা হয়েছে।

তার ঘোষণায় বলা হয়, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু ও সাবানের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর কর ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ছোট গাড়ি, টেলিভিশন ও এয়ার কন্ডিশনারের ওপর কর ২৮ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১৮ শতাংশে আনা হয়েছে। পাশাপাশি জীবনবীমা ও স্বাস্থ্যবীমার মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবার ওপর থেকে পুরোপুরি জিএসটি তুলে নেওয়া হয়েছে।

সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই কর সংস্কারের ফলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ রাজস্ব আয় কমতে পারে প্রায় ৪৮০ বিলিয়ন রুপি। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কার চেয়ে বেশি লাভ হবে ভোগব্যয় বাড়ায়, যা শেষ পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতি পূরণেই সহায়ক হবে।

ভারতের স্টেট ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সৌম্যকান্তি ঘোষ বলেছেন, “এই পদক্ষেপ অর্থনীতিকে নতুন গতি দেবে। মানুষ বেশি খরচ করলে শিল্প খাত চাঙ্গা হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে, আর সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি অনেকটাই পূরণ হয়ে যাবে।”

এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে এফএমসিজি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো— হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজের মতো কোম্পানিগুলো বিক্রির নতুন সম্ভাবনা দেখছে। পাশাপাশি স্যামসাং, এলজি, সোনি ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিকস পণ্য ও মারুতি, টয়োটা, সুজুকির মতো গাড়ি নির্মাতারা নতুন বাজার তৈরি করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বক্তৃতায় বলেছেন, “এই ব্যাপক সংস্কার সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য পরিবেশ আরও অনুকূল হবে।”

অর্থনীতিবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শুল্কনীতি ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ভারতের জন্য এই পদক্ষেপ একটি বড় কৌশলগত দাও। সরকার মনে করছে, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচির আওতায় এই কর সংস্কার ভারতের অর্থনীতিকে নতুন করে দাঁড় করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্ত সাধারণ ভোক্তাদের কাছে যেমন স্বস্তি বয়ে আনবে, তেমনি বাজারে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।