রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরমে: পাল্টাপাল্টি হামলা ও শতাধিক প্রাণহানি


প্রকাশ :

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। একদিকে ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তান বুধবার রাতে ১৫টি শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা প্রতিহত করা হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান দাবি করেছে, সীমান্তে ভারতীয় গোলাবর্ষণে জবাব দিতে গিয়ে তারা অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে।

ভারতের দাবি: ১৫ শহরে হামলা, লাহোরে পাল্টা আঘাত

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (৮ মে) এক বিবৃতিতে জানানো হয়, পাকিস্তান বুধবার গভীর রাতে অবন্তীপুরা, জম্মু, শ্রীনগর, পাঠানকোট, অমৃতসর, জলন্ধর, লুধিয়ানা, চণ্ডীগড়সহ ১৫টি শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারতের দাবি, ইন্টিগ্রেটেড কাউন্টার ইউএএস গ্রিড এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে এসব হামলা প্রতিহত করা হয়। ধ্বংস হওয়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষও উদ্ধার করেছে ভারতীয় বাহিনী।

পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারত বৃহস্পতিবার সকালে পাকিস্তানের লাহোরসহ কয়েকটি শহরে সামরিক পরিকাঠামোর ওপর বিমান হামলা চালায়। এতে লাহোরে রাডার ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি ভারতের। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, এটি ছিল প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ।

পাকিস্তানের পাল্টা দাবি: ভারতীয় ড্রোন ধ্বংস, সেনা হত্যা

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, “লাহোরের কাছে একটি ভারতীয় ড্রোন সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, এতে চারজন সেনা আহত হন। পাকিস্তান সফট ও হার্ড স্কিল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসরায়েলি তৈরি ২৫টি হারোপ ড্রোন ধ্বংস করেছে।”

অন্যদিকে, পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জাতীয় পরিষদে বলেন, “ভারতের ৪০ থেকে ৫০ জন সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে এবং সীমান্তে তাদের একাধিক সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।” পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা এই পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে সীমান্তে ভারতের “আগ্রাসী আচরণ” প্রতিহত করার জন্য।

নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে চলমান গোলাবর্ষণ

স্কাই নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে (LoC) গত দুই দিন ধরে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ চলছে। পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডি, লাহোর ও অন্যান্য সীমান্তবর্তী শহরে সাইরেন বাজানো ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পাকিস্তান বলছে, ভারতে চালানো হামলা সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সীমাবদ্ধ ছিল।

ভারতের পক্ষ থেকে অবশ্য এখনো ৪০-৫০ জন সেনা নিহত হওয়ার দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে ভারতীয় পুলিশ জানিয়েছে, পুঞ্চ জেলায় গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত: পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “পরবর্তী ১২০ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান যদি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে থাকে, তাহলে ভারতও পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হবে।” তিনি আরও বলেন, “ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এখন পর্যন্ত সীমিত প্রতিরক্ষা কৌশলেই পরিচালিত হচ্ছে।”

উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান আন্তর্জাতিক মহলের

এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। সীমান্ত সংঘর্ষ আরও বাড়লে তা দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন পর্যবেক্ষকরা।