রংপুরের দুই উপজেলায় নতুন করে আরো ৯জন মানুষের শরিলে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। জেলার পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় এ রোগের উপসর্গের রোগী পাওয়া গেছে। মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় ৯ জনের শরীরের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছে সরকারের রোগত্ত্বব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছিল না। গরুর পাশাপাশি ছাগলের মাংসেরও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শনাক্ত হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। পীরগাছা সদর,পারুল, ছাওলা, তাম্বুলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দাবি, গত দুই মাসে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে এক হাজার গবাদিপশু মারা গেছে। সরকারের রোগতত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর বিশেষজ্ঞরা জানান, রংপুরের মিঠাপুকুরের ইমাদপুর ইউনিয়নের রহমতপুর বাজার আমাইপুর গ্রামের গরুর মাংস পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স সনাক্ত হয়েছে। সেই গরু প্রক্রিয়াজাত করণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ এসেছে।এ রোগের উৎপত্তিস্থল প্রানীসম্পদ অধিদপ্তর এখনো নির্নয় করতে না পরলেও প্রতিদিন হাজার- হাজার গবাদিপশু রংপুরের সীমান্ত এলাকার হাটবাজার থেকে রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় আসছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত আগস্টে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছিল।একই সময়ে এই রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। গত আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে যার মধ্যে ৮ জনের শরীর অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলাতেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় এ দুই উপজেলা থেকে আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলার চারজনের নমুনা পরীক্ষায় একজন অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে কাউনিয়া উপজেলার পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও এখনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
রংপুর জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক আরবিন্দু কুমার মোদক জানান,প্রাথমিকভাবে পীরগাছা উপজেলার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮ জন ও মিঠাপুকুর উপজেলার চারজনের নমুনা পরীক্ষায় একজন অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।কাউনিয়া উপজেলার পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।রিপোর্ট আসলে সেখানেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে কিনা বোঝা যাবে।আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। উপজেলা গুলোতে আমাদের স্বাস্থ্য সহকারীদের নমুনা সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দিয়েছে আইইডিসিআর। আক্রান্তের খবর পেলেই তারা নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরকে পাঠাচ্ছে।একইসঙ্গে অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা অব্যাহত রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ দিকে আইইডিসিআরের সূত্র বলছে, ফ্রিজে রাখা গরুর মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে এমন একজন ছাগলের মাংসের সংস্পর্শে এসেছেন এমন কথা সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত শতাধিক রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেননি বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত জানান,কিছুদিন আগে আক্রান্ত এলাকায় মেডিকেল টিম গিয়েছিল। যারা আক্রান্ত তারা যাতে শঙ্কিত না হন এ জন্য তাদের সচেতন করতে কাজ অব্যাহত রয়েছে।আক্রান্তদের বেশিরভাগ মানুষই সুস্থ হয়েছেন।কেউ যেন আক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে আমরা নজর রেখেছি।
চিকিৎসকেরা জানান, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদি পশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া।এ জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগকে গরু-ছাগলের প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন।
রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন বলেন, যারা আক্রান্ত তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন,তা পর্যাপ্ত মজুত আছে। এ সংক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ভালোভাবে দিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।রোগটা যেহেতু প্রাণী থেকে আসা সেটা প্রতিকারের কাজ হচ্ছে প্রাণিসম্পদ দফতরের।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ জানান, জেলায় ১৩ লাখের বেশি গরু ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। এই রোগ প্রতিরোধে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এখন পর্যন্ত পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও রংপুর সদরে এক লাখ ৬৫ হাজার গবাদি পশুকে অ্যানথ্যাক্স প্রতিরোধী টিকা দেয়া হচ্ছে।ছাগলের মাংসে অ্যানথ্রাক্স শনাক্তের বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন তাকে জানাননি বলে দাবি করেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। ছাগলে অ্যানথ্রাক্সের আক্রান্তের হার খুব কম।অ্যানথ্যাক্স নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই।প্রাণিসম্পদ বিভাগ মসজিদ, মন্দির, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে জনসচেতনতা অব্যাহত রেখেছে।
প্রসঙ্গত, গত আগস্ট মাষে জেলার পীরগাছা উপজেলায় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে এক হাজার গবাদিপশু মারা যাওয়ার পাশাপাশি অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুজন। এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক মানুষ।পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এখন তা ছড়িয়েছে পুরো জেলাতে।
সরকারের রোগতত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর বিশেষজ্ঞরা জানান, রংপুরের মিঠাপুকুরের ইমাদপুর ইউনিয়নের রহমতপুর বাজার আমাইপুর গ্রামের গরুর মাংস পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স সনাক্ত হয়েছে। সেই গরু প্রক্রিয়াজাত করণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ এসেছে।জনস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য বিষয়গুলো অত্যাবশ্যকঃ-- গরুর মাংস বা সংশ্লিষ্ট কোনো পণ্য যাতে বাজারে বিক্রি বা খাওয়া না হয়।মৃত বা সন্দেহভাজন গরু দ্রুত সঠিকভাবে দাফন করা।প্রাণিসম্পদ অফিস ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে কাজ করা।যারা এ প্রক্রিয়াজাত করণে যুক্ত তাদের পরিচয় ও কার্যক্রম চিহ্নিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।জনসাধারণকে সচেতন করা হাত ধোয়া, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি।