বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য বিশ্বব্যাপী এক অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এই দেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে পারস্পরিক সহনশীলতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে আসছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান এবং উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সরকারের প্রতি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানের আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল পর্ব শুরু হবে। এই উৎসব কেবল হিন্দু সম্প্রদায়েরই নয়, বরং সার্বজনীন উৎসব হিসেবে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে একত্রিত করে। দুর্গোৎসব আমাদের জাতীয় জীবনে সহনশীলতা ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। এ উপলক্ষে আমি হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশের সব জনগোষ্ঠীর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। পূজা, ঈদ, বড়দিন কিংবা বৌদ্ধ পূর্ণিমা—যে উৎসবই হোক না কেন, সবাই পরস্পরকে সহযোগিতা করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। এ ধরনের আন্তরিকতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ পৃথিবীর অনেক দেশেই অনুপস্থিত।
জামায়াত আমির জানান, বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একাধিকবার বাংলাদেশের এই অনন্য সম্প্রীতির পরিবেশের প্রশংসা করেছে। কয়েক বছর আগে ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রে উইল কুক মন্তব্য করেছিলেন—“বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।” একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন প্রধান উইলিয়াম হানাও বলেছিলেন, “বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ সম্প্রীতির উন্নত মডেল।”
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের তুলনায় বাংলাদেশ একটি মধ্যপন্থী ও সহনশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এটিকে ‘মডারেট মুসলিম কান্ট্রি’ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ‘রোল মডেল’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এটি আমাদের জাতীয় গৌরবের বিষয়।
ডা. শফিকুর রহমান প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতের মতো এবারও যেন হিন্দু সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে তাদের দুর্গোৎসব পালন করতে পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে হবে। একই সঙ্গে জামায়াতের সর্বস্তরের কর্মী-সমর্থক এবং শান্তিপ্রিয় দেশবাসীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসে বহু ঝড়-ঝাপটা মোকাবিলা করেছে। কিন্তু পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভালোবাসার এই ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রয়েছে। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে এই সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির ধারাকে আরও শক্তিশালী করি, যেন বাংলাদেশ চিরকাল পৃথিবীর কাছে শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকে।