ড্রাগনের পাশাপাশি বস্তায় রসুন চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বড় কমলাবাড়ী এলাকার কৃষক আব্দুল্লাহ। ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল আব্দুল্লাহর। তার এই আগ্রহ এতটাই প্রবল ছিল যে, কিছুদিন আগে তিনি ফরিদপুরের একটি নেট ঝাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তবে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি এলাকায় ফিরে আসেন এবং ছোট ভাই আবু তালেবের ড্রাগন বাগানের দেখভালের দায়িত্ব নেন।
সেই বাগান থেকে ড্রাগনসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন এবং এলাকায় সাড়া ফেলেন। পরবর্তীতে, ড্রাগন বাগানের খালি জায়গায় বস্তায় বেগুন, করলা, শসা, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং লাভবান হন। ফলে তিনি একজন সফল কৃষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
আব্দুল্লাহ বলেন, “মসলা জাতীয় ফসল রসুনের দাম বাজারে অনেক বেশি হওয়ায় পরিবারে মসলার চাহিদা পূরণের জন্য আমি বস্তায় রসুন চাষের উদ্যোগ নিয়েছি।” তিনি আরও জানান, বস্তায় অনেক ফসল চাষে সফল হলেও এবছর পরীক্ষামূলকভাবে রসুন চাষ শুরু করেন এবং তা দেখে সবাই চমকিত হয়েছেন।
তিনি কোনো পরামর্শ বা সহযোগিতা ছাড়াই নিজ উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে ২,৫০০ পলিথিনের বস্তায় গবাদিপশুর মূত্র, গোবর, গুড়, নালি ও বেসন মিশ্রিত করে জৈব সার তৈরি করেন। এরপর, তা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে বস্তায় ভরে রসুন চাষ করেন। কয়েকদিন পরপর গাছের গোড়ায় পানি দেন। বর্তমানে গাছগুলো বেশ সতেজ রয়েছে।
প্রতি বস্তায় প্রায় ২০ থেকে ২৫টি রসুন গাছ রয়েছে, যা থেকে প্রত্যেক বস্তায় ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম রসুন উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিটি বস্তায় ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ হয়েছে, ফলে মোট খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। আগামী চৈত্র মাসে উত্তোলন করে বাজারে ভালো দাম পেলে প্রতি বস্তায় ২০০ টাকা হারে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হবে বলে তিনি আশাবাদী।
তিনি আরও জানান, বস্তায় ফসল চাষ করলে খরচ কম হয়, রোগ-বালাই কম থাকে এবং পরিশ্রমও কম লাগে। এটি একটি লাভজনক চাষ পদ্ধতি, তাই তিনি বিভিন্ন ধরনের ফসল বস্তায় চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
বাজারে মসলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আব্দুল্লাহ এর চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি আশা করছেন, সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি আরও বড় পরিসরে বস্তায় চাষ করবেন। তবে, এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ পাননি বলে জানান। যদি কৃষি বিভাগ থেকে উৎসাহ ও সহায়তা পান, তাহলে তিনি এই পদ্ধতিকে আরও বিস্তৃত করবেন।
এলাকাবাসীরা জানান, আব্দুল্লাহর অত্যাধুনিক বস্তায় চাষের পদ্ধতি দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র নিজে লাভবান হননি, বরং এলাকার অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করেছেন। তার বাগান দেখতে প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি ও দর্শনার্থীরা আসছেন।
রসুন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী মসলা ফসল। এটি রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও রুচি বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধি গুণাবলীর জন্য পরিচিত। নিয়মিত রসুন খেলে রক্তচাপ ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
প্রতি বছর আমাদের দেশে রসুনের ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যা দেশের জন্য কাম্য নয়। তবে বস্তায় চাষ পদ্ধতির মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে দেশের রসুনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওমর ফারুক জানান, রসুন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী মসলা ফসল। এটি রান্নার স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে এবং ঔষধি গুণ সম্পন্ন। প্রতি বছর রসুনের ঘাটতি পূরণে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, যা দেশের জন্য লাভজনক নয়।
তিনি আরও বলেন, অনাবাদি জমিতে বস্তায় চাষ করা গেলে খরচ কম হয়, রোগ-বালাই কম থাকে এবং উৎপাদন ভালো হয়। তবে আবাদযোগ্য জমিতে বস্তায় চাষ না করাই ভালো। তামাকের পরিবর্তে রসুন চাষ করলে দ্বিগুণ লাভ হয়। তিনি আশ্বাস দেন, কৃষক আব্দুল্লাহ যদি কৃষি বিভাগের পরামর্শ চান, তাহলে তাকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।