রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যাকান্ডের মামলায় ঢাকায় বসে তদন্তকরে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপ করে চার্জটি দেয়ার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, একইসাথে সাবেক প্রক্টরকে নিয়েও বানোয়াট এবংউগ্রতা মুলক বক্তব্য প্রদান ও শিক্ষার্থীদের সাথে গন শুনানি না করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।সে সাথে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের দেওয়া চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করেছে।শিক্ষার্থীরা এই ট্রাব্যুনালের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল ১১টা থেকে দিনভর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্তরে ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী অংশ নেন। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল, জেদিম, রায়হান, সিনথিয়াসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, ঢাকায় বসেই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা আবু সাইদ হত্যাকান্ড নিয়ে একটি পক্ষপাত দুষ্ট ও বিকৃত তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তারা শহীদ আবু সাঈদের সহপাঠী, আন্দোলনের সহযোদ্ধা কিংবা প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেননি। এমনকি কোনও গণশুনানিও হয়নি।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলামকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হত্যা মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে, যদিও তিনি সেই সময় আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং হত্যাকান্ডের সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। মূল অপরাধীদের আড়াল করতেই এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।শিক্ষার্থীরা চার্জশিট প্রত্যাহার করে নতুন করে নিরপেক্ষ তদন্ত ও গণশুনানি আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রকৃত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
অপর দিকে সংবাদ সম্মেলনে জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশ সরাসরি জড়িত হওয়া সত্বেও এই পুলিশি হত্যাকান্ডকে প্রশাসনিক হত্যাকান্ড হিসেবে চালিয়ে দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা। তাই আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনালের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেল সাড়ে ৫ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ গেটে সংবাদ সম্মেলন এসব উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বলেন,আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাতে ঘটনাস্থলে এসে স্বাক্ষী বাদীদের সাথে কথা বলে গণশুনানির মাধ্যমে সঠিক তথ্য পাঠাতে বলেন।এটি যদি করা না হয় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন।সংবাদ সম্মেলন আবু সাঈদ হত্যাকান্ডে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এর জড়িত ছিল তাদেরকে সূক্ষমভাবে পাশ কাটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনালের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন আরো বলেন, একটি তদন্ত প্রতিবেদনে ৩০ জন ব্যক্তির সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেছে। তবে পূর্বের ধারাবাহিকতায় এবারও তারা কোনো পুলিশ সদস্যের নাম উল্লেখ করেননি। বরং একটি প্রশাসনিক অবহেলার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে অভিযুক্ত করেছেন, যা আমাদের কাছে প্রক্রিয়াগত বিচ্যুতি ও প্রহসনের শামিল। আমরা এই ট্রাব্যুনালের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছি।এছাড়াও, ২৩ জুন নির্ধারিত গণশুনানির পূর্ব ঘোষণা থাকলেও ট্রাইব্যুনালের একটি বিশেষ টীম রংপুরে না এসে অজ্ঞাত কারণে সেই গণশুনানি বাতিল করে এবং তড়িঘড়ি করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যায়। এই আচরণ তদন্তের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন আরো জানানো হয় যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনালের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা প্রকৃত দায়ীদের-বিশেষত যাদের নির্দেশে এই গুলিবর্ষণ ও হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে-তাদের আইনের আওতায় এনে প্রকৃত বিচারের প্রতিফলন নিশ্চিত করেন। একইসাথে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সমাজকে আহ্বান জানাই, তারা যেন এই বিচার প্রক্রিয়ার যথাযথ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মোঃ শওকত আলী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কী বলেছে, সে বিষয়ে আমি এখনও জানি না। তবে চার্জশিট দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি ছিল বলে মনে হয়।