শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ জাতীয়

বিতর্ক-উদ্বেগের মাঝেই নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশে আসতে পারেন জাকির নায়েক


প্রকাশ :

বিশ্বজুড়ে আলোচিত ইসলামি বক্তা ড. জাকির নায়েক আগামী নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন—এমন খবর প্রকাশের পর থেকেই দেশ-বিদেশে চলছে তুমুল বিতর্ক ও উদ্বেগ। অর্থপাচার ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের অভিযোগে ভারতে অভিযুক্ত এই ধর্মপ্রচারককে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো এবং তার সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা ও পিরোজপুরে জাকির নায়েকের সমাবেশ আয়োজনের জন্য পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) অনুমতি দিয়েছে। তার অনুসারীরা একে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে দেখছেন, কারণ এটিই হতে পারে তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব নাকচ করেছে এসবি, সুফি মতাদর্শের অনুসারী বেশি থাকার কারণে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা ও পিরোজপুরে ধর্মীয় সংঘাতের আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম, তাই সেখানে অনুমতির বিষয়টি সহজ হয়েছে।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বেগ জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, “জাকির নায়েক ভারতের পলাতক আসামি। আমরা আশা করি, তিনি যেখানে যাবেন সংশ্লিষ্ট দেশ আমাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ বিবেচনায় নেবে।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ভারতের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’। মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, “আমরা ভারতের মন্তব্যটি লক্ষ্য করেছি।” একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতের আশ্রয় নেওয়ার প্রসঙ্গেও—“কোনো দেশই অন্য দেশের পলাতক অভিযুক্তকে আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।”

ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, জাকির নায়েকের সফরের অনুমোদন স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। “আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না; তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।”

২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে থেকেই তার বাংলাদেশ সফর নিয়ে আলোচনা চলছিল। ওই হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরা নায়েকের বক্তব্যে প্রভাবিত ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছিল।

সফরের সম্ভাব্য সময়সূচি

ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও পিস টিভির প্রতিষ্ঠাতা জাকির নায়েক ২৬ নভেম্বর ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন। ২৭ নভেম্বর আগারগাঁওয়ের কোনো কনভেনশন সেন্টারে ইনডোর ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার। পরদিন ২৮ নভেম্বর পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বড় সমাবেশে বক্তব্য দেবেন বলে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘স্পার্ক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ জানিয়েছে।

তবে অনুমতি নিয়ে এখনো বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। ডিএমপির উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেওয়া হয়নি। একইভাবে পুলিশ সদর দপ্তরও জানায়, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় চূড়ান্ত অনুমতি মেলেনি।

অন্যদিকে এসবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার তার সফরে আপত্তি করছে না। “তিনি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করেন, বাংলাদেশেও সমস্যা দেখছি না,” বলেন ওই কর্মকর্তা।

তিনি আরও যোগ করেন, “ভারতের বিষয়টা ভিন্ন। তাদের অনেক পলাতক আসামি এখনো ভারতে রয়েছে, যাদের ফেরত দেওয়া হয়নি। আমরা জাকির নায়েককে অতিথি হিসেবেই দেখছি—বাংলাদেশ সবসময় অতিথিদের স্বাগত জানায়।”

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে জাকির নায়েকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজ বা ওয়েবসাইটে এখনো বাংলাদেশ সফর নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

পটভূমি

৬০ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ধর্মপ্রচারক তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বভিত্তিক বক্তৃতার জন্য পরিচিত। ২০১৬ সালে অর্থপাচার ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর তিনি ভারত ত্যাগ করেন এবং মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। একই বছর ভারতে তার পরিচালিত ‘পিস টিভি’ চ্যানেলও নিষিদ্ধ করা হয়।

সেই থেকে তিনি বলে আসছেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ভারতে ফিরবেন না।

সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)