রংপুরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, সংসদ ছাড়া গণভোটে যাওয়ার দাবী বাস্তবায়নে ঐক্যমত কমিশনকে সংসদের স্ট্যাটাস দেয়া হচ্ছে। এই কমিশন সার্বভৌম নয়, নির্বাচিত নয়, সংসদে পাস হয়নি। তারা কোন আইন পাস করলে তাহলে সেটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে।
শনিবার (১ নভেম্বর) রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন,৫৬টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়ায় ৩০টি দলকে ডাকা হয়েছে। যে দলগুলো ডাক পেয়েছে তাদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে দবী করেছে আগে গণভোট, পরে নির্বাচন। আমি সংবিধানের ছাত্র হয়ে বলতে পারি, সংবিধানে গণভোটের নিয়ম নেই। ৭২ সালের অরিজিনাল সংবিধানে এটি ছিল। গণভোটের জন্য একটি বিল ড্রাফট করতে হবে, তারপর সেটি কমিটিতে যাবে। এরপর সংসদে দেখার পর আমার কমিটিতে আসবে সংশোধনের জন্য। এরপর সংসদে পাস হওয়ার পর সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার পরিবর্তন করতে হলে তাহলে গণভোটে যেতে হবে।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ফেব্রুয়ারীতে জাতীয় নির্বাচন অন্তর্ভূক্তিমূলক করতে হবে। দেশের ইতিহাসে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টি, জাসদ, আওয়ামী লীগ মিলে শতকরা ৫০ ভাগ ভোট পেয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষকে নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার বাহিরে রাখলে ভবিষ্যতে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি হতে পারে। সরকারের উচিত এটি ঠেকাতে সকল দলকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা। না হলে দেশ দীর্ঘ মেয়াদে দ্বন্ধের ফাঁদে পড়ে যাবে। কিছু দল ঐক্যমত কমিশনের অনুষ্ঠানে স্বাক্ষর করে এক ধরনের ফাঁদে পড়ে গেছে। আজ তারা ঐক্যমত কমিশনের প্রতারণার শিকার হয়েছে বলছেন। আমরা এমন ঐক্যমত কমিশন চাইনি। ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব বুঝে গণভোটে জনগণকে নিয়ে যাওয়া দূর্ভেদ্য ব্যাপার। গণভোট হলো ভবিষ্যত সংসদকে বেঁধে ফেলার অপচেষ্টা। ঐক্যমত কমিশনের ৪৮টি সংস্কার সুপারিশ ৮৪ পাতার প্রতিবেদন। গণভোটের মাধ্যমে পরবর্তী সংসদকে বেঁধে ফেলা হয়ে তা সাংবিধানিক ধারাকে ব্যহত করবে। এটি জাতীয় সংসদ, নির্বাচন ব্যবস্থাকে অপমানিত করবে। এমন বিকলাঙ্গ চিন্তা থেকে ঐক্যমত কমিশন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ও গণভোটের সমর্থনে থাকা দলগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে শামিম হায়দার পাটোয়ারী বলেন,বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি দেশের প্রশাসনকে ভাগ করে নিয়েছে। তা তথ্য উপদেষ্টা এক বক্তব্যে বলেছেন। এর বাহিরে কোন দল যদি ভোটে আসে, এই প্রশাসনিক কাঠামো সেই দলকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে দেবে না। নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো সাজাতে হবে ভোটের আগে। নিরপেক্ষ, সৎ প্রশাসনিক কাঠামো ছাড়া সঠিক নির্বাচন করা সম্ভব নয়। দেশে সুুষ্ঠু নির্বাচন না হলে আন্দোলনের পর আন্দোলন, বিপ্লবের পর বিপ্লব হবে। নির্বাচিত সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। নেপালে ১৩ বছরে ১৭টি মুভমেন্ট হয়েছে। এমন আমাদের দেশেও হতে পারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা আজমল হোসেন লেবুসহ অন্যরা। এরপর জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির কর্মী সম্মেলনে যোগ দেন।