শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ জাতীয়

জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনা


প্রকাশ :

রংপুরে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীতে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই দলের পক্ষের প্রস্তুতির কথা বলা হলেও গণঅধিকার পরিষদের কোনও তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে জাতীয় পার্টি তিন দিন ধরে সমাবেশের সমর্থনে প্রচার-প্রচারণা মাইকিং অব্যাহত রেখেছে। আগামীকাল শুক্রবারের (৮ নভেম্বর) সমাবেশকে ঘিরে বড় ধরনের সহিংস ঘটনার আশঙ্কা করছেন রংপুর বাসী।

রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আগামী শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে গণঅধিকার পরিষদের বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। অপরদিকে একই দিন বিকেলে জাতীয় পার্টি সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মী সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে।একই দিনে দুই দলের কর্মসূচিকে ঘিরে নগরী জুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।দুই পক্ষের মাঝে এদিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। যদিও গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবেন।

জাতীয় পার্টির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার জাতীয় পার্টি রংপুর মহানগর ও জেলার যৌথ কর্মীসভা পার্টির কার্যালয়ের সামনে বিকেল ৩টায় শুরু করবে। এতে পার্টির রংপুর মহানগর ও জেলা নেতারা ছাড়াও মহানগরের ৩৩টি ওয়ার্ড এবং আট উপজেলা কমিটির সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও মালামাল ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের দায়ী করে আসছিলেন। ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে হামলা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করা হলেও নেপথ্যে সমন্বয়কদের উসকানির অভিযোগ করেন তারা।

জানা গেছে, গত রোববার (৩ নভেম্বর) গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও কটূক্তিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার জন্য জাতীয় পার্টির নেতাদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য মোঃ হানিফ খান সজীব। সেই সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনাসহ বক্তব্য প্রত্যাহার করে না নিলে রংপুরসহ সারা দেশে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে গণবিপ্লব এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।অপরদিকে জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাসহ গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে সারা দেশে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে ঘোষণা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।শনিবার (২ নভেম্বর) রংপুর নগরীতে লাঠি মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশে করে জাতীয়পার্টি। বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ভিপি নুরের গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে গোটা দেশে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।আমরা ইসরায়েলের টাকায় চলা গণঅধিকার পরিষদকে হিসাব করি না।জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে আমরা প্রস্তত আছি।একটি গোষ্ঠী ভিপি নুর, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুলাহকে ব্যবহার করে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। আমি ভিপি নুরসহ অন্যদের হুঁশিয়ারি দিতে চাই রাজপথে দেখা হবে, রাজপথে ¯েøাগান হবে, রাজপথে রক্ত যাবে, রাজপথে মিছিল হবে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা প্রস্তত।এর আগে দুই দিন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। এ সময় দলের নেতা-কর্মীরা সকল ষড়যন্ত্রকে রাজপথে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টি লাঠি মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ করে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করছেন।

রংপুরের তৃণমূল পর্যায়ের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বলেছেন, গণঅধিকার পরিষদ ঢাকায় তাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়েছে,ভাঙচুর করেছে। তাদের রংপুরে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। এ ঘটনা নিয়ে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা পাল্টা সমাবেশ আহ্বান করলে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অভিজ্ঞ মহল।

এদিকে এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির জানান, শুক্রবার জাতীয় পার্টি রংপুর মহানগর ও জেলার যৌথ কর্মীসভা পার্টির কার্যালয়ের সামনে বিকেল ৩টায় শুরু করবে। এতে পার্টির রংপুর মহানগর ও জেলা নেতারা ছাড়াও মহানগরের ৩৩টি ওয়ার্ড এবং আট উপজেলা কমিটির সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি পার্টির মহানগর ও জেলার সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।শুক্রবারের কর্মসূচি সফল করতে মাঠে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। জেলা জুড়ে মাইকিংয়ের পাশাপাশি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পার্টির নেতারা কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন।

পরদিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলছেন, রংপুরে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি বিক্ষোভ মিছিল করে। যেখানে ফ্যাসিবাদ পতনের অন্যতম রূপকার ডাকসুর সাবেক ভিপি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও গণঅধিকার পরিষদ সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে ভাষায় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও কটূক্তিমূলক শ্লোগান সহ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ ফ্যাসিস্ট হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার সহযোগী জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের এমন অসভ্য আচরণ ও জঘন্য কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। জুলাই বিপ্লবের শহীদ আবু সাঈদের রক্তস্নাত রংপুরের মাটিতে গণহত্যাকারী খুনি হাসিনার ফ্যাসিস্ট ও তার সহযোগীদের রাজনীতির স্থান হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন দলটির নেতারা।

কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফা বলেন, শুক্রবার আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে যৌথ কর্মীসভা করাহবে। এরপর অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।কে কোথায় কি করল এটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করব। এজন্য পার্টির নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য হানিফ খান সজীব বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব।আমাদের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, পোস্টারিংকরাও হয়েছে।বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্তুতি ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। এই মুহূর্তে আমরা জাতীয় পার্টি নিয়ে ভাবছি না।