মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ মতামত

ধর্মের সাক্ষী- মোহাম্মাদ ইয়ার আলী


প্রকাশ :

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকাল দশটায় গোটা দেশ শুনশান নীরবতা। ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে কোন লোক বের হচ্ছে না। গ্রামে গঞ্জে মানুষ যার যা কাজে সবাই ব্যস্ত। সচেতন মানুষ শুধু মাঝে মাঝে টিভির খবরের কথা শুনতে টিভির রিমোট কন্ট্রোল নড়াচড়া করে। যেহেতু টিভির খবরের ওপরে মানুষের আস্থা কম, তাই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন চ্যানেলে তারা ঘোরাঘুরি করে।অপরদিকে গ্রামের মানুষজন টিভির পর্দায় দেশে কি হচ্ছে তার জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে থাকে-

"কি খবর, জিজ্ঞেস করছে একে অপর,

উত্তর নাই চলছে সবাই ঝোপর ঝোপর।

মোবাইলের নেট বন্ধ ,টিভিতে চলছে মন্দ,

রেডিওর তার নাই, বিদ্যুৎ নাই দেশ অন্ধ।

অন্যের খবরে ব্যস্ত, নিজের কপাল মন্দ,

তবুও জিজ্ঞাসা, কি হলো ভাই, কি হলো।

সাংবাদিকের চোখ বন্ধ,পত্রিকার নাই ছন্দ,

বিদেশের খবরের ভক্ত, রাজপথে রক্ত।

খবর কি ভাই, খবর কি সকলের প্রশ্ন,

উত্তর দেয়না কেউ সবাই হতাশা গ্রস্ত"

সাংবাদিকদের এদিক সেদিক ছুটাছুটি আর ফাকা রাস্তাঘাটের ছবি টিভির ক্যামেরায় প্রর্দশন করে ব্যর্থ বিপ্লবের তির্যক মন্তব্য।বেশিরভাগ সাংবাদিকদের বিবরণে বৈষম্য বিরোধী জনগনের "মার্চ টু ঢাকা" প্রোগ্রাম ব্যর্থ হতে চলার খবর। শুধু মাঝে মাঝে দু-একটি চ্যানেল ছোটাছুটি করছে কোথাও কিছু ঘটছে নাকি তা বের করতে। ওদিকে গণভবনে আয়রন লেডির দরবারে বসেছে গোপন বৈঠক। সেখানে আয়রন লেডি আর তার নবরত্ন সভাসদদের নিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার নানান ফন্দি ফিকির পরিকল্পনা আঁটছে। শত শত ছাত্র জনতাকে হত্যার পরেও তার আত্মার উপলব্ধিতে যেন কোনই অনুশোচনা নেই উল্টো অনুশোচনার পরিবর্তে ১৯৭১ সালের পূর্ব পাকিস্তানের হানাদার সেনাবাহিনীর মতো নির্মম ভাবে ছাত্রজনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র যুদ্ধের ঘোষণার পরিকল্পনা শুরু হয়। ব্যর্থ সেনা শাসকদের ধমকানো আর হত্যাকাণ্ডের নায়ক পুলিশ বিডিআর র‍্যাবের প্রশংসা। আইরন লেডির মুখে অহংকারের রক্ত আভা, ক্ষমতার মসনদে থাকার উদগ্রীব মনোবাসনা, বক্র চাহনি ছাত্র জনতাকে দেখে নেওয়ার ওঙ্কার। সাথে পাশের কুরসীতে বসা রাষ্ট্রের মালিকের দ্বিতীয় উত্তরাধিকারীনি কন্যা মাফিয়া ডন,অর্থ পাচারকারীনির চক্রের মুলহোতা,আইরন লেডির দুর্দান্ত প্রতাবের অনুপ্রেরণাদায়ী, বিপদের সহযোগী,ক্ষমতার ভোগকারীনি যার অর্থপাচারের নেশা দেশটাকে করেছে অর্থনৈতিক করেছে অর্থনৈতিক ফোকলা। তারপাশে নবরত্নের একজন যার চকচক করা টাক মাথা, যিনি পাশের দেশের কাছে সার্বভৌমত্ব বিক্রেতার পরামর্শদাতা। সকলের ক্রুর হাসি,বক্র চাহনি,উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সবকিছু মিলে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ দরবার বিষণ্নতায় ভরা। মাঝে মাঝে ফোন পাশের দেশ আর গোপন সংবাদ দাতাদের পক্ষ থেকে। চতুর্দিক থেকে খবর কোথাও কিছু হচ্ছে না,সবকিছু ঠিকঠাক,কোন সমস্যা নাই।আপনি এগিয়ে যান আমরা আছি আপনার সাথে। এই ধরনের নির্ভরতার প্রতিশ্রুতিতে মনকে আইরন থেকে আরো শক্তিশালী পদার্থ ডায়মন্ডের মতো করার লক্ষে বেগবান হওয়ার প্রত্যাশা চোখে মুখে অগ্নিসপলিংগর মতো ভেসে উঠছে। তাইতো সেনাপতিকে বারবার ধমকের সুরে হুকুমের পর হুকুম চালিয়ে দিচ্ছে। সেনাপতি শুধু জী জাহাপনা,জী জাহাপনা বলে কাসুমাসু ভাব দেখাচ্ছে। হঠাৎ সেনাপতির মোবাইলের কন্ঠে বেজে উঠলো,সেনাপতি আইরন লেডির অনুমতি নিয়ে ফোনটা ধরল। অপর কণ্ঠ থেকে ভেসে আসতে লাগলো স্যার সব শেষ। চতুর্দিকে নিরস্ত জনতার ঢল হঠাৎ রাস্তায় আক্রমণ প্রতিবাদ প্রতিরোধ জনস্রত কোনদিগেই টেকানো যাচ্ছে না। সশস্ত্র সুসজ্জিত সেনারাশজনগণের দিকে বন্দুক তাক করতে চাচ্ছেনা,সবাই হাতিয়ার গোটায়ে বিপ্লবী জনগণকে স্বাগতম জানাচ্ছে। তাদের ছাবকথা নিজের দেশের জনগণের উপর চালাবে না আর গুলি। কারণ এদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাদেরই বাবা -মা ভাই বোন আত্মীয়-স্বজন বন্ধু অথবা সন্তান সন্ততি সব।আত্মরক্ষায় ব্যস্ত সবাই কেউ কারো হুকুম শুনতে চাচ্ছেনা স্যার, এখন কি করনীয়। আর্জেন্ট অর্ডার প্লিজ স্যার। ফোন ধরে কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে আয়রন লেডি সেনাপতির দিকে তাকিয়ে তার চোখে মুখে ভয় আর হতাশা, উদ্বিগ্নের ছাপ আয়রন লেডিকে ভীত করে। কি হয়েছে জিজ্ঞাস করতেই সেনাপতি ক্ষমা করবেন স্যার,বলে হাত তুলে বললেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী গণভবনের চতুর্দিকে জনস্রোত লক্ষ লক্ষ জনতা আমাদের ধরার জন্য এদিকে এগিয়ে আসছে ।সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে গুলি না করে স্বাগত জানাচ্ছে, পুলিশ বিডিআর অ্যাপ রাস্তা থেকে পালিয়েছে। আমরা হয়তো এখনই সবাই ধরা পড়বো মৃত্যু নিশ্চিত। এত জনগণ সামলানো অসম্ভব। এরপর নবরত্নের সবার কাছেই চতুর দিক থেকে ঘন ঘন ফোন আসতে শুরু।তখন সময় সকাল ১১ টা আইরন লেডির কাছে বিদেশ থেকে ফোন আসা শুরু ,টিভির পর্দায় তখন হঠাৎ সিনেমার পর্দার মতো লক্ষ লক্ষ নিরস্ত মানুষের ঢল দেখাতে শুরু করল। পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে আবাল বৃদ্ধ বনিতা নারী পুরুষ শুধু প্রতিবাদের গানে আকাশ বাতাস মুখরিত করে রাস্তায় নেমে রাজপথ,রাজধানী, গ্রাম, গঞ্জ শহরে উল্লাসে ফিটে পড়ল।সেনাপতি হটাৎ দুঃসাহস দেখে প্রধানমন্ত্রীকে আরজ করলেন জাহাপনা ক্ষমা করবেন আপনার আর সময় নেই। আপনাকে এখন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে হবে অথবা পালানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। হাতে সময় নেই মাত্র ৪৫ মিনিট। কেন ৪৫ মিনিট প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে সেনাপতি বলেন জাহাপানা চতুর্দিকে লোকজন আমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে ভেতরে ঢুকতে সময় লাগবে মাত্র ৪৫ মিনিট। হঠাৎ বিষাদের ছায়া ঘিরে ফেলল রাজপ্রাসাদের উপস্থিত সভা সদের মাঝে। সবাই ভিত হুকুম ছাড়াই উঠে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো। আইরন লেডি সেনাপতিকে বলল পাশের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন লাগাতে। পাশের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পেতে সময় লাগলো আরো ১৫ মিনিট। অবশেষে টেলিফোন সংযোগে কোন প্রকার ভূমিকা ছাড়াই সরাসরি আরজ, খবর খারাপ, আমি আপনাদের দেশে আসতে চাই। পাশের দেশের বন্ধু আর বিদেশ মন্ত্রীর দেওয়া উপাধি স্বামী হতচকিত হয়ে জিজ্ঞাস করল কি হয়েছে বন্ধুবর। সর্বনাশ চতুর্দিকে লোকজন আমাকে ঘিরে ফেলেছে।আমাকে এখনই পালাতে হবে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বন্ধু এক মিনিট নীরবতা কেটে বললেন ঠিক আছে ,আমি দেখছি, কি করা যায়।সরাসরি উত্তর দিলেন না তিনি। রাজ দরবারে আয়রন লেডির রাজ্য ক্ষমতা ছেড়ে মুহূর্তে জীবন বাঁচানোরই আশ্রয় প্রার্থনা মনে হল হঠাৎ সূর্য ডুবে গেল রাতের অন্ধকার কালো রেখা দেখা দিল। নিকোষ কালো অন্ধকারে জীবন হাবুডুবু খেতে লাগলো। সভাসদের মান্যবর সদস্য বৃন্দ কেউ কারো দিকে না তাকিয়ে পোশাক পাল্টে পালিয়ে গেল। মনে হলো কেয়ামতের ময়দানের বিচার শুরু হয়েছে,তাই কেউ কারো দায় স্বীকার করতে চাচ্ছিলনা। মুহূর্তে রাষ্ট্রের মালিকের দুই কন্যা শুধু এক পোশাকেই গাড়িতে করে পালিয়ে গেল। পাশে হেলিকপ্টার দাঁড়িয়ে ছিল,সেখানে উঠে বিমানবন্দরের মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা হেলিকপ্টারে উড়ে গেলেন। এখান থেকে প্রস্তুত সামরিক বিমানে গন্তব্যহীন পথে পাশের দেশের আকাশ সীমানার দিকে ছুটে চললেন। পাইলট বারবার জিজ্ঞাসা করছে জাহাপনা আমরা কোথায় যাব? শুধু একটাই কথা জানিনা,চলতে থাকো। পাশের দেশের বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ কর ,সে দেশের যে কোন বিমানবন্দরে নেমে পর।বিমান যখন পাশের দেশের আকাশ সীমায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।তখনও বন্ধু তার কোন উত্তর দিচ্ছিল না,তাকে গ্রহণ বা আশ্রয় দিবে না সিদ্ধান্ত তিনি একাই নিতে পারছিল না। তিনি তার দেশে জরুরী মিটিং ডাকলো। কিন্তু বিমান আকাশেই ঘুরতেই থাকলো ঘুরতেই থাকলো। মনে হল একজন আয়রন লেডি,বিশাল ভূখণ্ডের মালিক, মুহূর্তেই ভূখণ্ডহীন, সীমানাহীন একজন ব্যক্তি। যিনি ঠিকানার সন্ধানে বিভিন্ন জনের কাছে প্রার্থী আশ্রয়। কয়েক ঘন্টার জন্য হলেও এই মহাবিশ্বের অধিপতি আল্লাহ তাকে ভুখন্ডহীন ভিক্ষারিতে পরিণত করে দিলেন।

পাশের দেশে সাবেক আইরন লেডির বেঁচে থাকার জন্য সামান্য একটি জায়গা ও নিরাপদ আশ্রয় ভিক্ষা করতে লাগলো। তারা আশ্রয় দিবে কি দিবে না এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মিটিং ডেকে পরামর্শ করতে লাগলো। এদিকে ২-৩ ঘণ্টা আকাশে বিমান ঘুরপাক খাওয়াতে বিমানের তেল শেষ হতে লাগলো। পাইলট বারবার যাত্রীকে হুশিয়ার করে দিতে লাগলো বিমানের তেল শেষ হতে যাচ্ছে এখনই অবতরণ করতে হবে কিন্তু অবতরণের পারমিশন নেই। পাইলট আইরন লেডিস এই ভিখারিণীকে বললেন আমাদের হয়তো আকাশি এখন মরতে হবে।কেউ আমাদের কে নিতে চাচ্ছে না ।অবশেষে বিমানের জরুরি অবতরণের পারমিশন মিলল। বিমান গাজিয়াবাদ ঘাঁটিতে জরুরী অবতরণ করল কিন্তু আয়রন লেডির অভ্যর্থনা জানানোর কেউ আসলো না। তাকে ভিখারিনীর কোটায় ফেলে আশ্রয় দিবে কিনা, এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিতে আরো দুই ঘন্টা চলে যায়। অবশেষে দু হাত তুলে জীবন ভিক্ষার সাহায্য চাইতে চাইতে একসময় তারা শুধু সামান্য সময়ের জন্য থাকার জায়গার নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে আশ্রয়ের অনুমতি প্রদান করেন। হায়রে জীবন সকাল দশটায় দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিশাল ভূখণ্ডের মালিক,১১টায় রাজপ্রাসাদে আয়রন লেডি,সকাল সাড়ে এগারোটায় একজন ভিখারিনী ,পরদেশে আশ্রয় প্রার্থী। অতঃপর বন্দিনীর জীবন আর ভিখারির মতো অনুদান, অন্যের দয়ার ওপর বেঁচে থাকা ,সবকিছুই স্মরণ করে দেয় কোরআনের সেই চিরন্তন বানী-

"কুল্লিলা-হুম্মা মা-লিকাল মুলকি তু’তিল মুলকা মান তাশাউ ওয়া তানঝি‘উল মুলকা মিম্মান তাশাউ ওয়াতু‘ইঝঝুমান তাশাউ ওয়া তুযিল্লুমান তাশাউ বিইয়াদিকাল খাইরু; ইন্নাকা ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীর"

তুমি বলঃ হে রাজ্যাধিপতি আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন; যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন; আপনারই হাতে রয়েছে কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনিই সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।

জীবনের কৈশোর কাল থেকে আয়াত গুলো মুখস্ত করে নিয়মিত পড়ে যাই কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ এর আগে ইতিহাসে পড়েছি কিন্তু দেখা হয় নাই। আগস্ট মাসের ৫ তারিখ দুপুর বেলার কাহিনী লোকে যাকে বলে ৩৬শে জুলাই এর কাহিনী স্বচক্ষে দেখে ইসলামের এই বাণীর প্রতি অবিচল বিশ্বাস আর দৃঢ়তা আরো যায়।আল্লাহর ক্ষমতার কাছে মাথা নত হয় আর তার ভালোবাসায় করুনায় নয়নে অশ্রু ঝরে। ইতিহাসে এই আয়াতের একজন নির্মম সাক্ষী হিসেবে পৃথিবীর দরবারে নিজেকে হাজির করি।