রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ সারাদেশ

রাউজান-রাঙ্গুনিয়ায় ১৪ মাসে ৩১ খুন, অস্থির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি


প্রকাশ :

গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত উত্তর চট্টগ্রামের রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ঘটে গেছে টানা হত্যার ঘটনা। এই ১৪ মাসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩১ জন। রাউজানে ১৭ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৪ জন। বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির মতো কারণ।

রাউজানে একের পর এক খুন

রাউজানে হত্যার সূচনা হয় গত বছরের ২৮ আগস্ট, যখন আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর পরপরই একই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে কয়েকজনকে খুন করা হয় বিভিন্ন ঘটনায়। চলতি বছরেও সহিংসতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। জানুয়ারিতে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে মুহাম্মদ হাসান, মার্চে কমরউদ্দিন জিতু ও মো. রুবেল, এপ্রিল মাসে প্রকৌশলী নূর আলম বকুলসহ আরও কয়েকজনের জীবন ঝরে যায়।

সবশেষ অক্টোবরের ২৫ তারিখে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারা যান যুবদল কর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলম।

রাউজান থানা সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৩ জন রাজনৈতিক সংঘাতের বলি। এসব ঘটনায় দেড় শতাধিক মামলা হলেও আসামি গ্রেপ্তারের অগ্রগতি খুবই সীমিত। পুলিশের ভাষায়, “হত্যাকাণ্ডগুলো অনেকটাই পরিকল্পিত, আর কিছু তাৎক্ষণিক রাগ-ক্ষোভ থেকে।”

রাঙ্গুনিয়ায় গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী—সবারই টার্গেট

রাঙ্গুনিয়ায় হত্যাকাণ্ডের চিত্রও ভয়াবহ। এ বছরের জানুয়ারিতে স্বামীর হাতে খুন হন গৃহবধূ জরিনা বেগম। মার্চে বাজারের দোকানে কুপিয়ে মারা হয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম তালুকদারকে। এপ্রিলের দিকে লেমুছড়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন আওয়াইমং মারমা। এরপর জুনে শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যা করে জামাতা, জুলাইয়ে প্রবাসফেরত মোহাম্মদ রাসেলকে কুপিয়ে ও গুলি করে মারে দুর্বৃত্তরা।

অগাস্টে আধিপত্যের দ্বন্দ্বে খুন হন স্থানীয় সন্ত্রাসী রুবেল। সেপ্টেম্বর মাসে পরপর তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটে—গৃহবধূ রুমা আক্তার, দিনমজুর রহমত উল্লাহ ও যুবক খোরশেদ আলমের। সর্বশেষ আগস্টে মাদ্রাসাছাত্র ইমরান নবীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের ব্যাখ্যা ও চ্যালেঞ্জ

দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড মাদক ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি এটিএম শিফাতুল মাজদারও জানান, প্রতিটি মামলার অগ্রগতি মনিটর করা হচ্ছে, এবং অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, “রাউজান-রাঙ্গুনিয়ার সাম্প্রতিক সহিংসতা পুলিশের বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে। সন্ত্রাসী বা অপরাধী—কেউ ছাড় পাবে না। জনগণকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”

কী বলছে স্থানীয়রা

স্থানীয়দের ভাষায়, এই দুই উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। সামান্য বিরোধও এখন প্রাণঘাতী রূপ নিচ্ছে। অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব আর অপরাধীদের দাপটে মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।