সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ সারাদেশ

জিন দিয়ে অপারেশন করান ‘বানেসা পরী’, ইশারায় দেন ইনজেকশন


প্রকাশ :

জিনের মাধ্যমে করানো হচ্ছে টিউমার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা। সমান তালে চলছে ঝাড়ফুঁক, তেল থেকে শুরু করে পানি পড়া বাদ যাচ্ছে না কিছুই। এমনকি সেই জিন হাজির করে করা হচ্ছে অপারেশনও, হাতের আঙ্গুলের ইশারায় দেন ইনজেকশন। 

শুনতে খুব অবাক লাগলেও ঠিক এমনটাই ঘটেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট পূর্ব নয়াপাড়া গ্রামে। চিকিৎসার নামে এভাবেই লোকজনের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গ্রামবাসী।

অভিযুক্ত ওই নারীর নাম মোছা. জাহেরা বেগম (৫২)। যিনি নিজেকে পরিচয় দেন ‘বানেসা পরী’ নামে। সম্প্রতি সময়ে তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন গ্রামবাসী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কালাই উপজেলার পুনট পূর্ব নয়াপাড়া গ্রামে প্রায় একযুগ ধরে চিকিৎসার নামে এভাবেই প্রতারণা করে আসছেন জাহেরা বেগম। তিনি নিজেকে পরিচয় দেন বানেসা পরী নামে। ওই গ্রামেই সপ্তাহে চারদিন রোগী দেখেন তিনি। ওই এলাকায় বাবার বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন তার এই তথাকথিত চিকিৎসালয়। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার বাবা আবুল হোসেন, তার ভাই আব্দুল মান্নান ও বোনের স্বামী জাহিদুল ইসলাম।

প্রথমে রোগীর ফি ৫ টাকা নিলেও এখন নেন রোগীর ফি ৩০ টাকা। আর এ প্রতারণা ব্যবসা করে জমি কিনেছেন। আবার তার ভাই আব্দুল মান্নানকে ফ্ল্যাট বাড়িও করে দিয়েছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় অর্ধশত রোগী প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা ও ভ্যানে করে পুনট পূর্ব-নয়াপাড়া গ্রামে আসছেন জিনের চিকিৎসা নিতে। সিরিয়ালের জন্য প্রতি রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৩০ টাকা।

এ সময় এলাকাবাসী জানান, চিকিৎসার নামে দেওয়া হয় আঙ্গুল দিয়ে (হাতের ইশারায়) ইনজেকশন, জিন ছাড়ানো, তেল পড়া, পানি পড়া এবং ঝাড়ফুঁক। রোগের ধরণ অনুযায়ী জিন দিয়ে করা হয় অপারেশন। তথাকথিত এ অপারেশনে ফি নেওয়া হয় হাজার হাজার টাকা।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে আসা এক টিউমার রোগী বিলকিস বলেন, ‘অনেক দিন থেকে লোকমুখে শুনে এসেছি তার কথা। এবার তাকে দেখাতে এসেছি, দেখি কি হয়...।’

দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই তার কাছে রোগ সারাতে এলেও জিনের মাধ্যমে অপারেশন ও চিকিৎসাকে প্রতারণা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রসুল বলেন, ‘একটা ইসলাম বিরোধী কাজ। আমরা চাই গ্রাম থেকে এই প্রতারণা ব্যবসা বন্ধ হোক।’

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মহাতাব আলী প্রামাণিক বলেন, ‘উনি যা করছে, এটা প্রতারণামূলক কাজ। এটা জায়েজ নয় আর এটা ঠিক নয়। এই প্রতারণা ব্যবসা বন্ধের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অভিযোগের বিষয়ে জাহেরা ওরফে বানেসা পরীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চাইলে তার বোনের স্বামী জাহিদুল ইসলাম তাতে বাধা দেন। এক পর্যায়ে জাহিদুল ইসলাম জানান, জাহেরা ওরফে বানেসা পরী অসুস্থ। তাই কথা বলা যাবেনা।  

কিছুক্ষণ চেষ্টার করে কথায় হয় বানেসা পরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি জিনের সঙ্গে কথা বলি, আমার নাম বানেসা পরী। আমাকে সাইড দেন, আমি চলে যাবো। এখান থেকে সরে যান। আমি জিন দিয়ে পানি পড়া, তেল পড়া, ঝাড়ফুঁক দেই।

কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মাহফুজ আলম বলেন, আমি এইমাত্র জানতে পারলাম উপজেলার পার্শ্ববর্তী কোনো এক গ্রামে জিন দ্বারা ঝাঁড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও প্রতারণামূলক। কোনভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। কেবলমাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকরাই চিকিৎসা করতে পারেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, পুনট পূর্ব নয়াপাড়ার যে বিষয়টি আমরা শুনলাম। গ্রামে একজন ব্যক্তি ভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে জিন দ্বারা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা দিচ্ছেন। আমি আমাদের কালাইয়ের নাগরিকদের আহ্বান করবো তারা যেন এই ধরনের অন্ধ বিশ্বাসী না করেন। আর যিনি এই ধরনের কাজ করছেন তার ব্যাপারে আমরা প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নিবো।