পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিতে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার তরুণ রাকিবুল ইসলাম। উপজেলা কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজস্ব ৫০ শতাংশ জমিতে 'তাই ওয়ান কিং' জাতের পেঁপে চাষ করে তিনি এখন বাম্পার ফলনের মুখ দেখেছেন।
রাকিবুলের বাগানে প্রায় ৫০০টি পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে—বিভিন্ন আকারের পেঁপেতে ভরে উঠেছে পুরো বাগান। তার হিসাব অনুযায়ী, বাগান থেকে কমপক্ষে ১২ হাজার মণ পেঁপে উৎপাদন হবে।
শুধু পেঁপেই নয়, বাবার সঙ্গে যৌথভাবে গড়ে তোলা এই সমন্বিত খামারে রয়েছে হাঁস, মাছ, সবজি চাষ এবং জৈব সার উৎপাদনের ব্যবস্থাও। রাকিবুল ইসলাম রাজারহাট সদর ইউনিয়নের দুধখাওয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।
তিনি জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এসএসআইপি-রেইনস প্রজেক্টের সহায়তায় তিনি প্রায় পাঁচ মাস আগে ৫০ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করেন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে প্রতিটি গাছ থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২০ থেকে ৩০ কেজি পেঁপে উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাকিবুল বলেন, “পুকুরপাড়ে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি লাগিয়েছি, হাঁসের খামার করেছি, পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছি। সব মিলিয়ে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি—পেঁপে, মাছ ও হাঁস বিক্রি করে ছয় লাখ টাকার মতো আয় হবে।”
রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, “স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্টের (এসএসআইপি) আওতায় ৩০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যুব মডেল বাস্তবায়নের জন্য আমরা রাকিবুল ইসলামকে সহযোগিতা করেছি। তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষের প্রদর্শনী দিয়েছেন। প্রত্যাশা করছি, প্রতি গাছে গড়ে ২০ কেজি করে ফলন পাওয়া যাবে। তাকে জৈব সার তৈরিতেও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি হাঁস পালন, মাছ চাষ এবং মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। এতে তার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে এবং বাজারজাত করে আর্থিক লাভবান হবেন।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাকিবুলের বাগান পরিদর্শনে গিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এসএসআইপি-রেইনস প্রজেক্টের আঞ্চলিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. নজরুল ইসলাম বলেন, “এই যুবক একটি ইনডিভিজুয়াল মডেল হিসেবে পেঁপে চাষ শুরু করেছেন। এখানে পাঁচ শতাধিক 'তাই ওয়ান কিং' জাতের পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রত্যেকটি গাছ থেকে গড়ে ২০-৩০ কেজি পর্যন্ত ফলন হবে বলে প্রত্যাশা। তিনি ভার্মি কম্পোস্টও উৎপাদন করছেন, যা নিজ খামারে ব্যবহার করার পাশাপাশি বাজারেও বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া তাকে সমন্বিত খামার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি ৭৫ শতাংশ জমির পুকুরে মাছ চাষ এবং হাঁস পালন করছেন। তাকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও মৎস্য দপ্তরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই মডেল দেখে অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হলে দেশের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।”