বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ সারাদেশ

রংপুরে পালিয়ে আত্মরক্ষার পর শিশু পূনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়ে আবারও নির্যাতনের স্বিকার স্মৃতি


প্রকাশ :

পালিয়ে আত্মরক্ষার পর রংপুর সমন্বিত শিশু পূনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্রে গিয়ে ফের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নিবাসী স্মৃতি আক্তার (১৬)। তার অভিযোগ,পূনর্বাসনে কেন্দ্রে শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও যৌণনির্যাতনের তথ্য গণমাধ্যমে বলায় তার চুল কেটে দিয়েছে কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা। সেই সাথে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বারবার হয়রানি ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের অনিয়মের তথ্য গোপন করার জন্য চাপ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই কিশোরী দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। এদিকে রংপুর সমন্বিত শিশু পূনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্র থেকে নিখোঁজের ১৩ দিনেও দুই নিবাসী আশা ও নিতু উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতনরা। 

পূনর্বাসন কেন্দ্রের নির্যাতন থেকে মেয়েকে রক্ষায় বুধবার (২৫ জুন) রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ নিজ জিম্মায়নিতে আবেদন করেন নিবাসী স্মৃতি আক্তারের মা মুক্তি বেগম। সকাল ১১টায় রংপুর সমন্বিত শিশু পূনর্বাসন (বালিকা) থেকে স্মৃতিকে আদালতে আনার কথা থাকলেও বিকেল ৫টার দিকে তাকে আনাহয়। আদালতের বিচারক সোয়েবুর রহমান স্মৃতির জবান বন্দী নেন এবং এজলাসে শুনানী করে তাকে মা মুক্তি বেগমের জিম্মায় দেন। 

আদালতে ভুক্তভোগী স্মৃতি আক্তার জানান, সকাল ১১টায় তাকে আদালতে উপস্থাপন করার কথা থাকলেও পুলিশ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাকে দু’বার থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেই সাথে পালিয়ে আত্মরক্ষার সময় যে বাড়িতে গিয়ে নিবাসী স্মৃতি ও কৃতি উঠেছিল সেই বাড়িতে তাকে নিয়ে গিয়ে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বিকেলে স্মৃতিকে আদালতে উপস্থাপন করে পুলিশ। 

স্মৃতি আক্তার বলেন, পূনর্বাসন কেন্দ্রে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে আমিসহ ৪ জন পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে আবারও সেই কেন্দ্রেই পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রে যাওয়ার পর সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। আমার কারণে তাদের পূনর্বাসন কেন্দ্রের দূর্নাম হয়েছে বলে। আমি ঘুমিয়ে থাকলে তারা আমার চুল কেটে দিয়েছে। আমি অসুস্থ্যতা অনুভবকরলে তারা শুধু মাত্র নাপা ট্যাবলেট খেতে দেয়। যারা আমার ও নিবাসীদের সাথে শারীরিক,মানসিক ও যৌন নির্যাতন করেছে আমি তাদের বিচার চাই। 

স্মৃতি আক্তারের মা মুক্তি বেগম বলেন, জীবন বাঁচাতে আমার মেয়ে পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ আদালতের মাধ্যমে আবারও সেই পূনর্বাসন কেন্দ্রে আমার মেয়েকে পাঠিয়েছে। মেয়ে কেমন আছে জানতে আমি পূনর্বাসন কেন্দ্রে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা আমার সাথে দূর্ব্যবহার করেন। আমি নাকি আমার মেয়েকে পাচার করতে এসেছি বলে। আমার মেয়ের চুল কেটে দেয়া সহ নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করবো। 

এ ব্যাপারে অ্যাড. জোবাইদুল ইসলাম বলেন, পূনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী স্মৃতি আক্তারকে তার মায়ের জিম্মায় দিতে আদালতে স্মৃতিকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আদালত স্মৃতির জবান বন্দী নিয়ে তাকে তার মায়ের জিম্মায় দিয়ে দিয়েছে। তবে আমার প্রশ্ন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা এক শিশুকে নিরাপদে থাকার জন্য রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে। সেখানে নিবাসীরা যদি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে যায়। সমাজ সেবা উপ-পরিচালকঅনিল চন্দ্র বর্ম্মন নিবাসী শিশুদের ধর্ষণের সহযোগিতা করেছে। তিনিসহ পূনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

উল্লেখ্য, নগরীর দেওডোবা ডাংগীর পাড় এলাকার রংপুর সমন্বিত শিশু পূনবার্সন কেন্দ্রে গত ১২ জুনরাত থেকে নিখোঁজহন নিবাসী নিতু, স্মৃতি, কৃতি ও আশা নামে চার কিশোরী। ১৫ জুন পরিবারের সদস্যরা স্মৃতি ও কৃতিকে নগরীর চিড়িয়াখানা এলাকা থেকে উদ্ধারকরে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে পূনরায় পূনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠায়। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের পূনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। আপত্তির কারণ হিসেবে পূনর্বাসন কেন্দ্রে মেয়ের উপর নির্যাতন ও তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত বলে গণমাধ্যমকে জানান।