রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজে কমপ্লিট শাটডাউন দিয়ে ২১ দফা দাবীতে সূচী পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। রবিবার (২২ জুন) সকাল ৯টায় কলেজ প্রাঙ্গনে মিছিলনিয়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করতে থাকে। এরপর তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সকাল ১০টায় শতশত শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদিক্ষণ শেষে নগরীর লালবাগ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শ্লোগান দিতে থাকে। এতে করে রাস্তার দু’পাশে যান জটের সৃষ্টি হয়। দূর্ভোগে পড়েন যাতায়াত কারীরা।খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা লালবাগ রেল ক্রসিংয়ে থাকা আন্দোলন কারীদের সরিয়ে রেল চলাচল স্বাভাবিক করে। এরপর কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রমিজ আলম, মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তোফায়েল আহমেদসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পর সড়ক থেকে সরে যায় শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে আগামী ২৪ ঘন্টার জন্য আন্দোলন কর্মসূচী স্থগিত করে।
শিক্ষার্থী মনোয়ার হোসেন, আরমিলা জাহান, মনিষা ইসলামসহ অন্যান্যরা বলেন, উত্তরের অক্সফোর্ড খ্যাত কারমাইকেল কলেজ একটি শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা। রংপুরের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও এখানে আধুনিক ক্লাসরুম নেই, পরিবহন ব্যবস্থা নেই, বিশাল কলেজের নিরাপত্তার জন্য কোন পুলিশ বক্স নেই। এমন নানা অপ্রাপ্তির মাঝে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের ২১ দফা দাবী মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
শিক্ষার্থীদের ২১ দফা দাবীর মধ্যে রয়েছে, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ফ্যান, বেঞ্চ, পর্যাপ্ত আলো, হোয়াইট বোর্ড নিশ্চিতকরা, প্রতি বিভাগে প্রজেক্টরের মধ্যে ক্লাস পরিচালনার ব্যবস্থা করা, মাসিক পরীক্ষার আয়োজন করা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জারিকৃত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরা, প্রতিক্লাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্য ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচনকরা ও শিক্ষার্থীদের দ্বারা গ্রুপওয়ার্কের ব্যবস্থা করা, কলেজ ম্যাগাজিন প্রকাশ ও শিক্ষা মূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, কলেজে নতুন বিভাগের সংযোজন করা, শতাব্দী ভবনে ক্লাস শুরুকরা ও ক্লাস রুমের সংখ্যাবৃদ্ধি করা, শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ড নিশ্চিতকরা, পুলিশ বক্স নির্মাণ, যাতায়াতের জন্য বাস ক্রয়, অডিটরিয়াম ভবনেনির্মাণের কাজ শেষ করা, ছাত্র ও ছাত্রী বিশ্রামাগার মেরামত ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, ওসমানী হল সংস্কার করে দ্রুত মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ করা, সিএম হলের পরিবর্তে নতুন হল নির্মাণ, হেল্পলাইন নম্বর চালু, আইসিটি ভবনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা নিশ্চিত করা, আর্থিক কার্যক্রমে অনলাইন পেমেন্টসিস্টেম চালু, কলেজের দখল হওয়া জায়গা উদ্ধার, ঐতিহ্যকে ধারণ করে কলেজের প্রধানফটক নির্মাণ, লাইব্রেরী ও সেমিনারে পর্যাপ্ত বই সরবরাহ, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কলেজে কম্পিউটার, ফটোকপি, অফিস স্টেশনারী দোকানের ব্যবস্থা করার দাবী জানানোহয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রমিজ আলম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজেই শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। তাদের দাবী পূরণে কলেজের অধ্যক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার দপ্তরসহ কলেজের বিভিন্ন বিভাগে তালা লাগিয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা তাদের সাথে কথা বলেছে। তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টার মাধ্যমে দাবী পূরণের ঘোষণা না আসলে তারা কলেজে আবারও শাটডাউন কর্মসূচী পালন করবে।