বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ সারাদেশ

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ


প্রকাশ :

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হককে ‘মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ মামলায় গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। 'মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায়' প্রিয় শিক্ষককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোমবার (২০ জুন) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো পূরণ না করা হলে থানা ঘেরাও সহ কঠোর আন্দোলন এর ডাক দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।   

এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, এক হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু ব্যক্তিকে হত্যা দেখিয়ে একটি ভুয়া মামলা সাজিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হককে পরিকল্পিতভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা বলে দিতে চাই অতি দ্রুত তাকে মুক্তি দিতে হবে এবং যথাযথভাবে তদন্ত করে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুল হকের মুক্তিসহ তিনদফা দাবি তুলে ধরেন। দাবি গুলো হলো-  বেরোবি শিক্ষক মাহামুদুল হককে কোন আইনি প্রসেস অনুসরণ করে গ্রেফতার করা হয়নি সেহেতু তাকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে ষড়যন্ত্রের পিছনে যারা জড়িত তাদের খুজে বের করতে হবে, বেরোবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আগামী ৩ কার্য দিবসের জন্য আমাদের সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করছি।আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো পূরণ না করা হলে থানা ঘেরাও সহ কঠোর আন্দোলন এর ডাক দেয়া হবে।   

 সমাবেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার সোহাগ বলেন, আমার শিক্ষক মাহমুদুল হক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য, ডেইলি স্টারের একজন প্রবীণ সাংবাদিক, ইউএনবি'র সাবেক সাব-এডিটর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী। এমন সম্মানিত একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ভরে রাখা খুব ন্যাক্কারজনক ঘটনা।এক প্রহসন ও হয়রানিমূলক মামলায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অতঃপর, কাল বিলম্ব না করে তাকে সরাসরি আদালতে নেওয়া হয় এবং সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।এ নিয়ে ৫ আগস্টের পর ৩য় বারের মতো জুলাই হত্যাকান্ডের বিভিন্ন মামলায় তাকে এজাহার ভুক্ত করা হলো যেগুলোর সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আবু সাঈদ ভাই শহিদ হওয়ার পর তিনিই প্রথম শিক্ষক হিসেবে এই পুলিশি হত্যাকান্ডের বিচার চান। এছাড়াও পুলিশের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকান্ডের তদন্তের দায়িত্ব পুলিশকে না দেওয়ার দাবি তোলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো পুলিশই  চক্রান্ত করে তাকে গ্রেফতার করেছেন। তাকে দ্রুত মুক্তি না দিলে আমরা হাজিরহাট থানা ঘেরাও করতে বাধ্য হবো।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ ইউসুফ বলেন, মাহমুদুল হক একজন বিবেকবান ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষক। তিনি শিক্ষক সমাজ ও সমাজের নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় তাঁকে টার্গেট করে হয়রানি করা হচ্ছে। এ গ্রেফতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ।

মাহমুদুল হকের সহধর্মিনী মাসুবা হাসান মুন বলেন, কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমার স্বামীকে পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছেন। এমনকি কথা বললে তাকে জঘন্যভাবে অপমান করার হুমকি দিয়েছেন। পুলিশের এমন আচরণই প্রমাণ করে মিথ্যা মামলায় আটক করার এই ঘটনাটি পুরোটাই সুপরিকল্পিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেই একটা কুচক্রী মহল এটা করেছেন। এই কুচক্রী মহলকে শনাক্ত করতে প্রশাসনের কাছে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুন বিকেলে রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকার নিজ বাসা থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মাহমুদুল হককে গ্রেফতার করে হাজিরহাট থানা পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যূত্থানে মুদি দোকানী শহীদ ছমেস উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায়  মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। যা তাঁর পরিবার ও সহকর্মীরা ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করছেন।