রোদেলা এক সকাল। কুড়িগ্রামের রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যেন উৎসবের আমেজ। তবে এটা কোনো মেলা নয়—এটা আশাভরসায় গড়া একটি নতুন শুরুর গল্প। সেই গল্পের নায়ক-নায়িকারা কুড়িগ্রামের হতদরিদ্র, অসহায় মানুষ। যাদের চোখে আজ একটু স্বস্তি, একটু স্বপ্ন—কারণ, যাকাত ফাউন্ডেশন অব আমেরিকা বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে ২০০ পরিবারের মাঝে দুটি করে ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য—স্বাবলম্বিতা গড়ে তোলা, জীবনের জন্য নতুন দিশা তৈরি করা।
বিধবা রেজিয়া বেগমের চোখে আনন্দের অশ্রু। “সংসার চলে না, জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। অনেক কষ্টে দিন চলে। এই ছাগল দুটি আমার জীবনের আশার আলো। বড় করে বাচ্চা হলে বিক্রি করব, সংসারে একটু ভরসা পাব।”
পাশে বসে থাকা এক পা-প্রতিবন্ধী নারী বলেন, “তিন বছর ধরে কর্মহীন জীবন। সংসারে উপার্জন নেই বললেই চলে। এই ছাগল দুটো আমার জন্য আশীর্বাদ। এগুলোই হবে আমার হাতিয়ার।”
তিস্তার ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো জয়নাল আবেদিন বলেন, “আমরা নদীর পাড়ের মানুষ, সব সময় আতঙ্কে থাকি ভাঙনের। এই ছাগল পেয়ে মনে হচ্ছে জীবনের একটা নতুন দিক খুলল।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মাহবুবুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আসাদুজ্জামান, ইউএনও মো. আল ইমরান, যাকাত ফাউন্ডেশনের প্রশাসন কর্মকর্তা মো. মাসুদ ও স্থানীয় প্রতিনিধি মো. তোফায়েল আহমেদ।
এই উদ্যোগের পেছনে আরও একজন নিরবে কাজ করে গেছেন—জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ। কুড়িগ্রামে এই গবাদিপশু বিতরণের সুপারিশ ও সহযোগিতা করেছেন তিনিই।
এ যেন এক ছোট্ট উদ্যোগ, অথচ যার প্রভাব বিশাল। দুটি ছাগল পেয়ে অনেক পরিবার আজ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে—জীবনকে একটু ভালোভাবে গড়ার, অসহায়ত্ব থেকে বেরিয়ে আসার।