লালমনিরহাট বার্তা
জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস : প্রেক্ষিত লালমনিরহাট
বার্তা ডেস্কঃ | ৩০ জুল, ২০২২, ৬:০৬ AM
জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস : প্রেক্ষিত লালমনিরহাট
জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উপলক্ষে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ। বঙ্গবন্ধু জন প্রশাসন পদক-২২ বিতরণ এবং জেলা পর্যায়ে জুম সফটওয়্যারের মাধ্যমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রক্ত¯œাত বাংলাদেশের সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজান্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। তাই সর্বস্তরের কর্মচারীদের (মন্ত্রী পরিষদ সচিব, সিনিয়র সচিব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, গ্রামে কর্মরত মাঠ পর্যায়ের কর্মী) জনগণের সেবায় নিয়োজিত থেকে অর্থাৎ সেবক হিসেবে কাজ করবেন। সেবার বিনিময়ে তারা বেতকন ভাতা গ্রহণ করে পরিবার পরিজন প্রতি পালন করবেন। চাকুরী শেষে পেনশনসহ অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন। কিন্তু স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী অতিক্রম হওয়ার পরেও আমরা কি সংবিধানের উল্লেখিত অনুচ্ছেদ মেনে চলছি? কিংবা মানতে পেরেছি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, কৃষকের ট্যাস্কের টাকায় সরকারী কর্মচারীদের মাহিনা হয়। তাই এদের প্রতি সম্মান জানিয়ে কথা বলবেন। সরকারী কর্মচারীরা সর্বসাধারণের কাছ থেকে স্যার শুনতে ও সর্বাগ্রে সালাম প্রত্যাশী । এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটায় কর্মকর্তা নিয়োজিত হয়েছেন, উক্ত কর্মকর্তাটিও বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে স্যার সম্মোধন শুনতে ও সালাম না পেলে ভীষণ মনোক্ষুন্ন হয়।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ জন প্রশাসন দিবসে বিশেষ ক্রোড়পত্রে দেয়া বাণীতে সরকারী কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, জনগন যাতে স্বচ্ছতা ও দ্রæততার সাথে কাঙ্খিত সরকারী সেবাসহ সকল ন্যায্য অধিকার পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, তিনি চাইতেন, প্রতিটি সরকারী কর্মচারী দক্ষ ও সৎ হবেন এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সঠিক পথে পরিচালিত হবেন। জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি (প্রাক্তন আমলা) ক্রোড়পত্রে প্রদত্ত বাণীতে উল্লেখ করেছেন, এ দেশ শুধু দেশ নয়। এ দেশ আমাদের স্বপ্ন, ধ্যান ও তিতিক্ষা দিয়ে ঘেরা-রক্ত দ্বারা সিক্ত,¯œাত ও পবিত্র। বাংলার মানুষ দরিদ্র ও অসহায় এবং তাই তাদের সেবাই হবে আমাদের ব্রত। আমরা সহজকে জটিল করব না এবং জটিলকে সহজ করব- এই আমাদের অঙ্গীকার। বস্তুত, চাকুরী শুধু প্রথাগত দায়িত্ব পালন নয় বরং আদর্শ ও স্বপ্নের এক অনুপম আলেখ্য হতে পারে।
সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ প্রনয়ন করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের রক্তে, মা বোনদের সম্ভ্রম হানী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের কতভাগ কর্মচারী এই বিধিমালা অনুসরণ করেন ? এতদ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলায় কর্মকর্তা সংবিধানে উল্লেখিত কর্মচারীদের তথ্য তুলে ধরছি। সরকার ঘোষিত সময় সূচী মোতাবেক সরকারী কর্মচারীদের কে সকাল ৯ টায় কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। হাতে গোনা কয়েকটি দপ্তর ছাড়া জেলা ও উপজেলা অধিকাংশ অফিস ৯ টায় পরিবর্তে সকাল ১০টায় কিংবা ১১ টায় খোলা হয়। বিকাল ৫ টার পরিবর্তে ২ টায় পর অফিস বন্ধ।
সম্প্রতি হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে সকাল ১১ টা পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা নেই। জেলা প্রশাসককে দেখানো হলো, তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে মোবাইলে বিষয়টি জানালেন। অতঃপর উক্ত কর্মকর্তাদের কোন শাস্তি হয়নি। কর্মকর্তা তার নিজ কর্মস্থল হাতীবান্ধা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে লালমনিরহাট শহরে অবস্থান করেন। ট্রেন যোগে হাতীবান্ধায় কর্মস্থলে উপস্থিত হন।
সরকারী বিধান হচ্ছে, সরকারী কর্মচারীকে তার নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে। কোন অবস্থায় ৮ কিলোমিটারের বেশী দূরে অবস্থান করতে পারবেন না। সরকারী কর্মচারী নিজ কর্মস্থল থেকে ৮ কিলোমিটার বাহিরে গেলে ভ্রমণ ভাতা পাবেন। লালমনিরহাট জেলা ও উপজেলায় কর্মরত অধিকাংশ কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী , গাইবান্ধা, লালমনিরহাটসহ এমনকি দিনাজপুরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। সেখান থেকে কর্মস্থলে আসেন। কেউবা সপ্তাহে দু’চার দিন অফিসে অবস্থান করেন, অনেকেই গাড়ি গাড়ি খেলেন। অথচ এই সকল কর্মচারীর কর্মস্থলে অবস্থানের জন্য বাসা ভাড়া দেয়া হয়। কর্মস্থলে অবস্থান করার মর্মে লিখিত অঙ্গীকার নিয়ে বাসা ভাড়া উত্তোলন করে থাকেন। অনেক কর্মচারী বছরের পর বছর নিজ দপ্তরের গেস্ট রুমে কিংবা দপ্তরের একটি রুম দখল করে নিজস্ব বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। সেই দপ্তরগুলোতে নৈশ্য প্রহরী রয়েছেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী যদি অফিসের রুমেই থাকেন, তবে উক্ত কর্মচারী নৈশ্য প্রহরী দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এজন্য জনগণের ট্যাস্কের টাকায় নৈশ্য প্রহরীকে বেতন দিতে হতো না।
অপর দিকে, সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালা বিধান মোতাবেক চাকুরীতে থাকাকালীন সময়ে কোন কর্মচারী ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোন সম্পদ ক্রয় কিংবা অর্জন করতে হলে তাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। তাছাড়াও প্রতি ৫ বছর পরপর সরকারী কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দেয়া বাধ্যতামূলক। আদৌ কি সরকারী কর্মচারীরা তাদের সম্পদের হিসাব সঠিক ভাবে দাখিল করেছেন?
এই বিধান অনুসরন করা হলে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, পিসি খোর, কর্মচারীরা চাকুরীতে যোগ দানের কয়েক বছরের মধ্যে কোটি টাকার মালিক কিংবা বিলাস বহুল বাসা বাড়ীর মালিক হতে পারতেন না। লালমনিরহাট শহরে অফিস সহায়ক ও অফিস সহকারীর বিলাস বহুল বাড়ী রয়েছে। তাই তো বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আমার কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ দুর্নীতি করে না। তোমরা শিক্ষত ব্যক্তিরা দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজ কর্মচারী রাজনৈতিক নেতা কর্মী, কর প্রতারক ব্যবসায়ী, পেশাজীবিদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ সহকারী কোষাগারে জমা নেয়া ও শান্তি ব্যবস্থা করা না হলে রক্ত ¯œাত বাংলাদেশ দারিদ্রতম দেশে পরিণত হবে। বঙ্গবন্ধু ভাষায় শোষক ও শোষিত শ্রেণীতে দেশের মানুষ বিভক্ত।
গত ২৩ জুলাই শনিবার বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিটে জেলা প্রশাসনের আহবানে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন ও বঙ্গবন্ধ জনপ্রশাসন পদক-২০২২ সংক্রান্ত সভা জুম সফটওয়ারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহককারির সংখ্যা ছিলো ২২ জন। তম্মধ্যে ২ জন সাংবাদিক, ১ জন সমাজ কর্মী। সরকারি কর্মচারির সংখ্যা ছিলো ১৯ জন। অথচ লালমনিরহাট জেলায় সরকারি দপ্তরের সংখ্যা ৬০ টির অধিক। উপজেলা পর্যায়ে অংশ গ্রহনকারি ৫ জন ইউএনওকে নিয়ে এর সংখ্যা দাড়ায় ৬৫ জনের অধিক। উল্লেখ্য জাতীয় দিবসটি শনিবার হওয়ায় অধিকাংশ সরকারি কর্মচারি কর্মস্থল ত্যাগ করে নিজ বাড়িতে কিংবা আনন্দ ভ্রমনে বাহিরে গেছেন। তাই এই অবস্থা চলতে থাকলে একদিকে থাকবে হার জিরজিরে মানব সন্তান, অপরদিকে থাকবে বিশাল মাংস বহুল ৭১ এর জানোয়ার ইয়াহিয়ার অনুসারী দুর্নীতিবাজ ও দৃর্বৃত্তরা।
(বাংলাদেশের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সকল ব্যক্তিকে কর্মচারি হিসেবে পরিগনিত করা হয়েছে। তাই কর্মকর্তার পরিবর্তে কর্মচারি উল্লেখ করা হল)