লালমনিরহাট বার্তা
উদ্বোধনের তিন মাস হলেও এখন পর্যন্ত ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের সুফল দেখছেন না নগর বাসী
রংপুর অফিসঃ | ৩১ আগ, ২০২২, ৭:০৯ AM
উদ্বোধনের তিন মাস হলেও এখন পর্যন্ত ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের সুফল দেখছেন না নগর বাসী

রংপুর নগরীতে যানজট নিরসন ও পথচারীদের সড়ক পারা পারের সুবিধায় প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে দিলেও ফুটওভার ব্রিজ দুটি কল্যান কর কাজে আসছেনা। উদ্বোধনের তিন মাস হলেও এখন পর্যন্ত ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের সুফল দেখছেন না। ব্রিজের নিচের অংশজুড়ে কিছু ব্যবসায়ীর অবৈধ দখলের কারণে আগের চেয়ে সড়কে বেড়েছে যানজট। সড়ক পারাপারে বেড়েছে জন ভোগান্তি।

নগরীর সচেতন মহল ফুটওভার ব্রিজ দুটি নির্মাণে যথাযথ স্থান নির্ধারণ করতে না পারা সহ সিটি করপোরেশনের সঠিক পরিকল্পনার অভাবকে দুষছেন।রংপুর সিটি মেয়র বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে রোড ডিভাইডারের মাঝে ফেন্সিং দিয়ে সড়ক পারাপার বন্ধ করা হবে। আর এটা সম্ভব হলে পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য হবেন।

রংপুর সিটিকর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সড়কে এবং সিটি করর্পোরেশন ভবনের প্রবেশ ফটকের কাছে অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন দুটি ফুটওভার ব্রিজ গত তিন মাষ আগে নির্মাণ করা হয়। ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। ব্রিজ দুটির ফাউন্ডেশন কংক্রিট ও পাটাতন সহ অন্যান্য অংশ স্টিলের। মূলত যানজট নিরসন ও পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে নিজস্ব অর্থায়নে ফুট ওভার ব্রিজ দুটি নির্মাণ করেছে রংপুর সিটি করর্পোরেশন।ফুট ওভার ব্রিজের জন্য কাক্সিক্ষ জমি না পাওয়াতে বিকল্প স্থান হিসেবে সিটি করর্পোরেশন ভবনের পাশেই একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রীজ নির্মানের পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ মোড়ে নির্মাণের স্তাব ছিল। পুলিশ প্রশাসনের কাছে পাঁচ ফুট জমি চাওয়া হয়েছিল।তারা জমি দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বাধ্য হয়ে সিটি করপোরেশন ভবনের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে।গত২১ সালের ডিসেম্বর মাষে ব্রিজ দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হতো। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেতে প্রায় সাত মাস বিলম্ব হওয়ায় ফুট ওভার ব্রিজ দুটির নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যায়।

চলতি বছরের ২২ সালের গত ২৮ এপ্রিল সিটি করর্পোরেশন ভবনের সামনে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটির উদ্বোধন করেন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।রংপুর কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল এলাকার ব্রিজটিও পথচারীদের পারাপারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। উদ্বোধনের গত তিন মাসে ফুটওভার ব্রিজ পারাপারে সাধারণ পথচারীদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।সড়ক পারা-পারে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্রিজ দুটি নির্মাণ করা হলেও সড়কের ডিভাইডার রাখা হয়েছে উন্মুক্ত।সড়কে কোনো ফেন্সিং না থাকায় পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে ইচ্ছে মতো সড়ক পারাপার হচ্ছেন।

দেখা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম রংপুর সিটি বাজার সংলগ্ন সড়কে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং পথচারীদের আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে উদাসীনতার কারণে এই সড়কে থাকা ফুটওভার ব্রিজটি শুধু সৌন্দর্য্য হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সিটি বাজার ও সিটি করর্পোরেশনসহ রাস্তার দুপাশ থেকে মানুষজন বেপরোয়া ভাবে পারাপার হচ্ছেন। কোনো বাধ্যবাধকতা বা প্রতিবদ্ধকতা না থাকায় কারো মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে নেই তেমন আগ্রহ।পথচারী বা সাধারণ মানুষ এই ব্রিজের সুবিধা না নিলেও কিছু ব্যবসায়ী ফুটওভার ব্রিজের নিচে গড়ে তুলেছেন ফলসহ বিভিন্ন পরসার দোকান।এতে করে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ফুটওভার ব্রিজের দুপাশে যানজট, মানুষের জটলা আর রাস্তা পারাপারে বেড়েছে ভোগান্তি।

রংপুর সিটি বাজারের সামনে কথা হয় মমিনূল ইসলাম নামে এক চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি খরচের ব্যাগ হাতে নিয়ে ডিভাইডারের ফাঁক ফোকর হয়ে সড়কের ওপারে যাচ্ছিলেন। ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধারণ করার চেষ্টা করা হলে ক্ষুদ্ধ হন তিনি। বলেন, ফুটওভার ব্রিজের ছবি তুলেন।এই ব্রিজের উপর দিয়ে তো কেউ পারাপার করে না। সবকিছুর নিয়ম আছে এখানে সেটা মানা হয়নি। আজ একারণে ব্রিজটি পথ চারীদের কাজেও আসছে না।

গতকাল বুধ বার দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো সিটি বাজারের পাশে জেলা পরিষদ কমিউনিটি সুপার মার্কেট থেকে ফুটওভার ব্রিজে মানুষের পারপার দেখার চেষ্টা করা হয়। এ সময়ে হাতেগণা প্রায় ৫০ জনকে ব্রিজের উপরে উঠতে দেখাগেছে। যাদের বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পারাপারের জন্য নয়, তারা উঠেছিল সেলফি তুলতে।বর্তমানে এটি এখানকার নিত্যদিনের চিত্র।

ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা স্কুল-পড়ুয়া শিক্ষার্থী আরিফ, রাশেদ বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে সুপার মার্কেটে এসেছিলাম। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে শহরের যানজট ক্যামেরাবন্দি করতে ফুটওভার ব্রিজের উপরে উঠেছি। এখান থেকে সেলফি অনেক সুন্দর হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বেশির ভাগ সময় ব্রিজের ওপর দিয়েই পারাপার হয়ে থাকি।যদি ক্যান্ট পাবলিক স্কুল মোড়ের মতো হতো ডিভাইডারে ফেন্সিং থাকত, তাহলে সবাই ব্রিজের উপর দিয়েই পারাপার হতো।

নগরীর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিপরীতে টার্মিনাল মৎস আড়তের কাছে কথা হয় সাহাালম নামে একজনের সাথে।এই তরুণ এই সমাজ উন্নয়নকর্মী বলেন, টার্মিনালে সবসময় যানজট থাকবেই। ওইখানে ফুটওভার ব্রিজর নিচে বাস থামিয়ে বেশির ভাগ বাস শ্রমিকেরা যাত্রী উঠা-নামা করে আসছেন। গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এই মহাসড়ক পারাপারে চরম দুর্ভোগের সাথে ঝুঁকি বাড়ছে। ফুটওভার ব্রিজ আছে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব না থাকায় সেটি কোনো কাজে আসছে না।সড়কের পুরো ডিভাইডার অরক্ষিত এবং রেলিং নেই। যার কারণে জীবনে ঝুঁকি নিয়েই মানুষজন সড়ক পারাপার হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, নাগরিক সুবিধার মধ্যে চলাচলের প্রশস্ত সড়ক, ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজ থাকলেই হবে না। এসব ব্যবহারের উপযোগিও করতে হবে। কিন্তু আমরা এই নগরীতে ভিন্ন চিত্র দেখছি। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণ, ট্রাফিক সিস্টেম এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে।রংপুর সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয় করে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর