লালমনিরহাট বার্তা
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ১৬ কর্মকর্তাকে বদলী, নেপথ্যে অবৈধ লেনদেন
স্টাফ রিপোর্টারঃ | ৩০ আগ, ২০২২, ৮:৩০ AM
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ১৬ কর্মকর্তাকে বদলী, নেপথ্যে অবৈধ লেনদেন

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসাথে বদলী করা হয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দরের শুরু থেকে একসাথে এতগুলো কর্মকর্তাকে বদলী করার রেকর্ড এবারই প্রথম। এ স্থলবন্দরের প্রধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বদলী/অফিস আদেশের চিঠি পাওয়ার সত্যতা রোববার সন্ধায় নিশ্চিত করেছেন। সরকারী চাকুরির এটি একটি নিয়ম মাফিক প্রক্রিয়া-বদলীর নির্দেশ পাওয়া কর্মকর্তা বললেও সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করেছে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ লেনদেনের সাথে জড়িত থাকায় তাঁদের সবাইকে এ স্থলবন্দর থেকে একযোগে প্রত্যাহার করে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে বদলী করা হয়েছে।

জানা গেছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, ঢাকা, আগারগাঁও কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) বিভাগের ডি এম আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি বদলীর আদেশের চিঠি গত ২৫ আগস্ট একটি জারি করা হয়। এতে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে বদলী করে সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমীন, ট্রাফিক পরিদর্শক জাহীদুর রহমান, হিসাবরক্ষক আদনান খালিদ বসুনিয়া ও ক্যাশিয়ার ভ্রমর কুমার সরকারকে কুড়িগ্রাম জেলার সোনাহাট স্থলবন্দরে, ট্রাফিক পরিদর্শক সালাউদ্দিনকে ফেনী জেলার পরশুরাম বিলোনিয়া স্থলবন্দরে, ট্রাফিক পরিদর্শক শাহিন মাহমুদ ও আমিনুল হককে ময়মনসিংহ জেলার গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরে, ওয়্যার হাউজ সুপারিনটেনডেন্ট মানিকুর রহমানকে ফেনী জেলার বিলোনিয়া স্থলবন্দরে, একই পদের মিনহাজ উদ্দিন, হারুন অর রশিদ, আবুল বাসার ও কম্পিউটার অপারেটর হাসমত উল্লাহকে যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দরে, ওয়্যার হাউজ সুপারিনটেনডেন্ট মাছুদ রানাকে দিনাজপুর জেলার হিলি স্থলবন্দরে, একই পদের ফিদা হাসানকে পঞ্চগড় জেলার বেনাপোল ও এস.এম মাসুম বিল্লাহকে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় স্থলবন্দরে এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সেলিম রেজাকে শেরপুর জেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দরে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে। একই তারিখে উল্লেখিত স্থলবন্দর গুলো হতে পদায়নকরা ১১ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে যোগ দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নানা অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির একটি লিখিত অভিযোগ এ বছরে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। এতে ভারতীয় ট্রাক হতে ওজন স্টেশনে অবৈধভাবে টাকা আদায়, খাদ্যশস্যের ট্রাক হতে টাকা গ্রহন, বিল শাখায় জালিয়াতি করে সরকারি রাজস্ব আতœসাৎ, আগত পণ্যবাহী গাড়ি ও ওজনের গাড়ির গড়মিল, রাত্রিকালীন ট্রাক চার্জ জমা না দিয়ে আতœসাৎ, ১/২ দিনের ছুটি নিয়ে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে না থাকা, ভুয়া চালান করা, ওজন স্কেলে পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে টাকা আতœসাৎ, বহিরাগতদের নিয়ে কর্মস্থলে আড্ডা দেওয়া প্রভৃতি নানা অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব হরিলুট ও লুটতরাজ করার উল্লেখ করা হয়েছে। এ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ড এফ এজেন্ট, শ্রমিক, আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের উল্লেখ করে দেওয়া অভিযোগে স্বাক্ষর না থাকলেও দুর্নীতি দমন কমিশন বিভিন্নভাবে খোঁজ-খবর নেয়। গত ৭ আগস্ট অভিযোগের কপি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের নিকট দেয় কমিশন। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১৪ আগস্ট অভিযোগের কপিটি পেয়ে ১৬ আগস্ট আমলে নেয়। এর ১১ দিনের মাথায় উল্লেখিত কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে বদলীর নির্দেশ দেয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, ঢাকা।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমীন বলেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দরে ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আমিসহ ১৬ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে বদলী করা হয়েছে। দুর্নীতির বিষয়টা জানিনা। এখানে দুর্নীতির কিছুই নাই। বিভিন্ন ধরনের বেনামী চিঠি-পত্র অনেকে অনেকভাবে দেয়। এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দল আছে। একে অপরকে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনায় এ রকম হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর