লালমনিরহাট বার্তা
অভিনন্দন! দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি
বার্তা ডেস্কঃ | ৭ সেপ, ২০২২, ৮:১২ AM
অভিনন্দন! দ্রৌপদী মুর্মু  ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি

২৫ জুলাই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথগ্রহণ করেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ঝাড়খন্ডের সাবেক রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর জীবনে অনেক বৈচিত্র্যময় পেশায় কাজ করেছেন। ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা, কেরানি।

রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে হয়েছেন কাউন্সিলর, বিধায়ক, মন্ত্রী ও রাজ্যপাল। একজন আদিবাসী নারী হয়েও ভারতীয় সংবিধানের সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ার পিছনে ছিল তাঁর কঠোর পরিশ্রম এবং সমাজসেবার প্রতি চরম নিষ্ঠা ও ব্রত।

সমাজ সেবার জন্য এমন পুরষ্কার ভারতীয় সমাজে খুব নারীর ভাগ্যেই জুটেছে।

মাত্র ৬৪ বছর বয়সে তিনি এ পদটিতে আসীন হলেন। তিনি এখন ভারতের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি। ভারতের স্বাধীনতার পর জন্ম নেওয়া কেউ এই প্রথম দেশটির সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মু দায়িত্ব নিলেনও এ সৌভাগ্য অর্জন সহজ ছিল না। একজন আদিবাসী নারীর একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে রাষ্ট্রের ওপর পর্যায়ে উঠে আসার বিষয়টি ভারতীয় সমাজে অনেক আলোচিত হয়েছে। দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশা রাজ্যের ময়ূরভাঞ্জ জেলার বাইদাপোসিত নামক এক সাঁওতালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আধ্যাত্মবাদে বিশ্বাসী ভারতীয় এই রাষ্ট্রপতি এখনো রীতিমতো ধ্যান করেন। ‘ব্রক্ষা কুমারী’ ধ্যানে অভ্যস্ত তিনি এ ধ্যান প্রতিদিনই নিষ্ঠার সঙ্গে করে যান। মূলত সাঁওতালদের ধর্মীয় বিশ্বাস অত্যন্ত প্রগাঢ়। এই বিশ্বাস সাঁওতালরা শত শত বছর ধরে ধারণ করে যাচ্ছেন।

বাইদাপেসিত গ্রামপ্রধানের মেয়ে দ্রৌপদী ভুবনেশ্বরের রামা দেবী উইমেন্স কলেজে লেখাপড়া করেছেন। কলেজ থেকে ¯œাতক হওয়ার পর প্রথমে সরাসরি অফিসে কেরানি এবং পরে স্কুলশিক্ষকা হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর স্থানীয় রাজনীতির মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে ওঠে আসেন।

প্রচারবিমুখ দ্রৌপদী মুর্মু ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে স্বামী, দুই ছেলে, মা ও ভাইকে হারিয়ে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েন। নিজেই গণমাধ্যমে নিজের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম এবং গভীর হতাশায় ভুগছিলম। ২০০৯ সালে ছেলের মৃত্যুর পর থেকে রাতে ঘুমাতে পারতাম না।’

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত রাজ্যের কৃষি ও জ্বালানি অধিদপ্তরে জুনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৪-৯৭ সাল পর্যন্ত রাইরংপুরে অরবিন্দ ইন্টেগরাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে শিক্ষককতাও করেছেন তিনি।

দ্রৌপদী মুর্মুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। তখন তিনি রাইরংপুর জেলার স্থানীয় নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। রাইরংপুর আসন থেকে ২০০০ ও ২০০৯ সালে দুইবার বিধানসভার সদস্য নিব্র্চিত হন। ২০০০-০৪ সালে তিনি রাজ্যের জোট সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। প্রথমে বাণিজ্য ও পরিবহণ মন্ত্রালয়ের দায়িত্ব পালন করলেও পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাম। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্য বিজেপির ‘পিছিয়ে পড়া আদিকাসী’ শাখার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ঝাড়খন্ড রাজ্যের প্রথম নারী রাজ্যপাল (গভর্নর) হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১৫ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।

দ্রৌপদী ওড়িশার প্রথম আদিবাসী নেত্রী- যিনি রাজ্যপালের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত টানা ছয় বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। বেশ সুনামের সঙ্গে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কার্যালয়ের দরজা সবসময় সব শ্রেণির মানুষের জন্য খোলা থাকত। রাজ্যপালের দায়িত্ব ছাড়ার পর তিনি ধ্যান করে সময় কাটাতেন। একই সঙ্গে রাইরংপুরে নানা সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। প্রকৃতপক্ষে দ্রৌপদী মুর্মুর জনসেবা ও জনসাধারনের প্রতি দায়বদ্ধতাই আজ তাকে জনপ্রিয় করে এতদূর নিয়ে এসেছে।( ভারত বিচিত্রা থেকে সংগৃহিত)

এই বিভাগের আরও খবর