লালমনিরহাট বার্তা
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় খালিহাতেই চলছে উদ্ধারকাজ
ডয়েচে ভেলে | ৭ ফেব, ২০২৩, ৭:১৫ AM
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় খালিহাতেই চলছে উদ্ধারকাজ

সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে ধুলোয় মিশে যাওয়া অবকাঠামো, যন্ত্রপাতির অভাব এবং প্রবল ঝড়-বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।এরপরও খালিহাতেই দুর্গতদের সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয়রা।

সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পের সূচনা। তুরস্কের সিরীয় সীমান্তবর্তী শহর গাজিয়ান্তেপে এর উৎপত্তি। সোমবার বিকাল নাগাদ আশপাশের এলাকায় অন্তত ৫০টি ‘আফটারশক' অনুভূত হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পনটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।

ভূমিকম্পে দুই দেশে এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশ। সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই এলাকায় ধ্বংসস্তূপ থেকে দুর্গতদের উদ্ধারের মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে ডয়চে ভেলেকে জানান স্থানীয় সাংবাদিক ওমর আলবাম। ইদলিবের প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে তুরস্কের সীমান্তবর্তী শহর সারমাদার এই সাংবাদিক জানান, শহরটি বলতে গেলে ধুলোয় মিশে গেছে।

তিনি বলছিলেন, ‘‘দুইবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে এখানে। দ্বিতীয়বারেরটি অনেক বেশি সময় ধরে হয়েছে। স্থানীয়রা আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।''

সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার বিমান হামলার কারণে আগে থেকেই এই শহরের ভবনগুলো নাজুক অবস্থায় ছিল বলে জানান তিনি। তবে ইদলিব প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন ভবনগুলোও ভূমিকম্পের কারণে গুঁড়িয়ে গেছে। অনেকেই পুরো পরিবারসহ ভবনগুলোর নীচে চাপা পড়েছেন।

চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হোয়াইট হেলমেট

যুদ্ধবিধ্বস্ত ভবনগুলো থেকে মানুষকে উদ্ধারে সাহায্য করতে কয়েক বছর আগে কাজ শুরু করে হোয়াইট হেলমেট নামের স্বেচ্ছাসেবী দল। ভূমিকম্পের পরও তারা কাজ করছে। তেমন কোনো যন্ত্রপাতি না থাকলেও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া মানুষগুলোকে উদ্ধারের। তবে এ কাজে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

ভূমিকম্পের পর কয়েকটি এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেছে। সাংবাদিক ওমর আলবাম জানান, ‘‘ভূমিকম্পের কারণে কত লোকের মৃত্যু হয়েছে এর সঠিক কোনো তথ্য এখনই জানা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি খুব জটিল।''

হোয়াইট হেলমেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা প্রায় ৭০০ মৃতদেহ এবং আহত অবস্থায় দুই হাজারের মতো মানুষকে উদ্ধার করেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু হোয়াইট হেলমেটের সাহায্যই পর্যাপ্ত নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। আর কিছু না হোক, অন্তত ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে মানুষকে উদ্ধার এবং চিকিৎসা-সহায়তাটুকু হলেও করা দরকার এখন।

‘‘ভোর ৪টার সময় ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা, আমরা কখনো কল্পনাও করিনি এমনটা। যেন কেয়ামত ঘটে গেছে। আমি ও আমার পরিবার বেঁচে গেছি, কয়েকজন প্রতিবেশীও প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু আমাদের সামনেই অসংখ্য ভবন মাটিতে মিশে গেছে। আমাদের ভবনেই পাঁচজন মারা গেছেন। হোয়াইট হেলমেট তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে'' বলছিলেন স্থানীয় এক বাসিন্দা।

সাধারণ মানুষের প্রচেষ্টা

সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পো এলাকাও ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে। সেখানেও উদ্ধারের পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি নেই। সাধারণ মানুষ যে যার মতো করে সাহায্যের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

৩০ বছর বয়সি স্থানীয় এক নারী জানান, যারা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোকজন। খালিহাতে ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করছেন তারা। কোনো যন্ত্রপাতি নেই। এটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তারা নিজেরাই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়তে পারেন।''

তিনি জানান, ঘরবাড়ি ভেঙে পড়লেও আলেপ্পোর অনেকে সেখানেই অবস্থান করছেন। কোথায় যেতে হবে তা যেমন তারা জানেন না, আবার দূরে কোথাও গিয়ে হোটেলে ওঠার মতো টাকাও তাদের নেই।

সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরকার নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস এলাকায় ৬৫৬ জনের মৃত্যু ও ১৪১৯ জনের আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। তবে এই সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও তারা উল্লেখ করেছে।

ঐতিহাসিক ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত

সিরিয়ার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, ভূমিকম্পবিধ্বস্ত আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস এলাকায় বেশকিছু ঐতিহাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যতম প্রাচীন ও বিশালাকৃতির প্রাসাদ আলেপ্পো সিতাদেলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রাসাদটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। অটোমান আমলের প্রাসাদটির ভেতরে একটি মসজিদের মিনারেও আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

ইউনোস্কোর ঐতিহ্যবাহী শহরের তালিকাভুক্ত আলেপ্পোতে অন্যান্য ঐতিহাসিক ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপের জন্য কারিগরি দল কাজ করছে বলেও তারা জানিয়েছে।  হামা শহরে ইমাম ইসমাইল মসজিদের মিনার ভেঙেছে এবং বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ভবন গুঁড়িয়ে গেছে। তারতুসের উপকূলে অবস্থিত মধ্যযুগের ঐতিহাসিক মারকাব প্রাসাদের বেশ কিছু অংশ ধসে পড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর