লালমনিরহাট বার্তা
বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল আছে কেবল নৈশ প্রহরী
রংপুর অফিসঃ | ৯ ফেব, ২০২২, ১০:৩৬ AM
বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল আছে কেবল নৈশ প্রহরী
রংপুর নগরী মাহিগঞ্জে প্রায় শত বছর আগে জমিদার রায় বাহাদুরের অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য একটি ডিস্পেনসারী চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। দেশ স্বাধীনের পর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে তত্ত¡াবধানে নাম মাত্র মূল্যে মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছিল ১৯৯৫ সালে রংপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান পরবর্তী সময়ের প্রথম রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মুক্তিযোদ্ধা শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু হাসপাতালটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন৤উল্লেখ্য, ১৯৯৮সালের ২২ আগষ্ট তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মাহিগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালটির অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিদের অসচেতনতার কারণে হাসপাতালটি এখন বন্ধ রয়েছে।সেই সময়ে বর্তমান সংসদ সদস্য বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিজস্ব অর্থায়নে হাসপাতালটি ৩০ শয্যায় যায় উন্নীত করে নাম দেন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে হাসপাতালে সক্ষমতা বাড়ানো হয় তৎকালীন রংপুর পৌরসভার তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হাসপাতালটির ঠিকঠাক চললেও কিছুদিনের মধ্যেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।এরপর কিছুদিন হাসপাতালটি এনজিওর সূর্যের হাসি ক্লিনিক ব্যক্তিগত ক্লিনিক নগর মাতৃসদন নানা নামে পরিচালিত হয় বর্তমানে সেগুলো বন্ধ অযতœ-অবহেলায় সমস্ত যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে গেছে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান আসবাব হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে এখন একজন নৈশ প্রহরী ছাড়া ভুলতে হাসপাতালে আর কিছুই নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মাহিগঞ্জের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালটি জন মানব শূন্য হাসপাতালের সামনে জানালার কাজ গুলো ভেঙ্গে পড়েছে নিচতলায় এক্স-রে রুমে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদশার নামে অন্যান্য ঘরে থাকা ধুলোর আস্তর পরেছে এক্সরে মেশিনের বিভিন্ন অংশে জং ধরে পড়ে আছে ওয়ার্ডগুলোর চেয়ার-টেবিল শয্যা রোগীর উপর মাকড়সার জাল বেঁধেছে। বীর মুক্তি যোদ্ধাদের জানালার পাশে অস্ত্রো পাচার কক্ষে যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে সেগুলো রয়েছে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে ওয়ার্ডের থাকলেও তারা খসে পড়েছে এর পাশের টাইলস করা একটি ওয়ার্ড রয়েছে ব্যবহার না করার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে মূল ভবনের পেছনে হাসপাতালে একটি টিনশেড ঘর ।দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে যন্ত্রপাতি রয়েছে সেটিও জরাজীর্ণ সেখানে একটি ঘরে হাসপাতালে বিছানা অস্ত্রোপাচারের কিছু পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালে পেছনের দেয়াল ভেঙে পড়েছে হাসপাতালে দেখা শোনার দায়িত্বে থাকা নৈশ প্রহরী সাইফুল ইসলাম হৃদয় বলেন দুই বছর ধরে আমি এই হাসপাতলে আছি একাই সবকিছু দেখাশোনা করছি এখানে এক্সরে মেশিন অপারেশন থিয়েটার চেয়ার-টেবিল এসি জেনারেটর সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে।
মাহিগঞ্জ বাসিন্দা শুভেন্দু চৌধুরী বলেন বঙ্গবন্ধু নামটি হচ্ছে বাঙালির প্রাণের স্পন্দন বঙ্গবন্ধুর নামে হাসপাতাল বন্ধ রাখা মানে জাতির প্রাণের স্পন্দন কে বন্ধ করে রাখা আমরা চাই হাসপাতালটি পুনরায় চালু করা হোক ।
স্থানীয় আইনজিবী পলাশকান্তি নাগ বলেন রংপুরে পুরাতন শহরের মানুষ অবহেলিত তার বড় উদাহরণ হাসপাতাল অদৃশ্য শক্তির ষড়যন্ত্রে হয়তো হাসপাতাল বন্ধ হয়ে আছে। প্রাথমিক সহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা আরো বড় কলরবে নিশ্চিত করা হোক এটা আমাদের দাবি মাহিগঞ্জ উন্নয়ন ফোরামের সংগঠক শাহাদত হোসেন বলেন আমরা সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসকের দফায় দফায় অবহিত করেছিলাম হাসপাতাল চালুর দাবিতে নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছিল কিন্তু আজ পর্যন্ত এটি চালুর কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না ।আমরা আশা করি দ্রæত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে চালু করা হবে।
রংপুর সিটিকর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, হাসপাতাল চালানোর সরঞ্জাম অর্থ সিটি করপোরেশনের কাছে নেই যদি কোন ব্যক্তি বা সংগঠন হাসপাতালটির জনস্বার্থে চালুর উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে প্রয়োজনে সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা করব।
বাণিজ্যমন্ত্রীর রাজনেিৈতক উপদেষ্টা কামুজ্জামান চৌধুরী তুহিন বলেছেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র কাজি মোঃ জুনুন হাসপাতালটি শুরুর তিন বছর সুন্দর ভাবে পরিচালনা করেছেন।বর্তমানে এটি অজ্ঞাত কারনে বন্ধ করে রেখেছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন। প্রতিরাতেই এই হাসপাতালের ভিতরে রাতে বসে বিভিন্ন মাদকের আড্ডা। তিনি ক্ষোভ করেবলেন, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল নাম করন হওয়ার কারনে কি আজ এ দশা।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. আসিফ আহসান বলেছেন,স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের এল.সি.ডিসি‘র অধিনে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালটি চালু করার উদ্বোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপনের জমিও অধিগ্রহন করা হয়েছে। আপাতত এখানেই বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করবে।
এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের সেবা নিশ্চিত করা হবে রংপুর পীরগাছা কাউনিয়া আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমি ১৯৯৫ সালে ৪০লক্ষ টাকা ব্যয়ে মুল ভবন করে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল আধুনিকায়ন করেছিলাম। এখন এটি সিটি করর্পোরেশনের তত্ত¡াবধানে, কি কারণে সিটি কর্পোরেশন হাসপাতালটি চালাতে পারছে না তা আমার জানা নেই। সরকারি বা বেসরকারি যেভাবেই হোক হাসপাতাল চালু করতে আমার কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমি অবশ্যই করবো।
এই বিভাগের আরও খবর