লালমনিরহাট বার্তা
‘ট্রে’ পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেসিনের মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাপক সাড়া
রংপুর অফিসঃ | ৫ ফেব, ২০২২, ১:১১ PM
‘ট্রে’ পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেসিনের মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাপক সাড়া
রংপুর অঞ্চলে ‘ট্রে’ পদ্ধতিতে বীজতলা ও চারা তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে অঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এ পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া ফেলছে। প্রতি বছর শীতের মৌসুমে বীজতলা নিয়ে কৃষকদের চিন্তায় থাকতে হয়। কখনো ঘন কুয়াশা নয়তো শৈত্য প্রবাহে নষ্ট হয় বীজতলা। প্রভাব পড়ে ফসলি জমিতে। এই পরিস্থিতিতে কম খরচে ট্রে পদ্ধতিতে সুস্থসবল বীজতলা ও চারা তৈরিসহ অধিক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন স্থানেযান্ত্রিক পদ্ধতিতে কৃষকেরা চাষাবাদ শুরু করেছেন।চলতি আউস মৌসুমে গত ১ফেব্রæয়ারী রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেসিনের মাধ্যমে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ আসিব আহসান যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপন করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।রংপুর কৃষি সমম্প্রসারন বিভাগের উপপরিচালক মোঃ ওবাইদুর রহমান মন্ডল বলেন,জেলার পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুরে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেসিন কৃষি ভুর্তকির মাধ্যমে ধানের চারা রোপনের জন্য ২ জন কৃষককে দেয়া হয়েছে।
রংপুর অঞ্চলের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলে এবার ট্রের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ৫৭ হাজার।ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির কারণে ধানের চারা গুলো হয় সরাসরি মাটিতে উৎপাদিত চারার চেয়ে অনেক সুস্থ-সবল।ধানের ফলন বেশি হওয়ার সঙ্গে কৃষক লাভবান হবেন।ধানের চারার ট্রে পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। নিয়মিত সার, সেচ, আগাছা পরিষ্কার করে দেওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের পরামর্শও দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুত্রে জানায়, পাঁচ জেলায় ৫৭ হাজার ট্রে বীজতলা তৈরির কাজ চলছে।রংপুরে ১২ হাজার, গাইবান্ধায় ২ হাজার ৫০, কুড়িগ্রামে ৩০ হাজার, লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৫০ এবং নীলফামারী জেলায় ৮ হাজার ৮৫০টি ট্রেতে বীজতলা তৈরিকাজ চলছে। কৃষকদের শ্রমিকের অপেক্ষায় না থেকে যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রের মাধ্যেমে চারা রোপণ ও কর্তন করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। কৃষি পদ্ধতিতে বোরোর বীজতলা ট্রে পদ্ধতিতে করলে কুয়াশা বা শৈত্য প্রবাহে নষ্ট হবে না। ট্রে পদ্ধতির চারাগুলো সুস্থ ও সবল হবে। চাষাবাদে ফলন বেশি পাওয়া যাবে। ট্রেতে বীজতলা তৈরির কারণে বীজের কোনো ক্ষতি হবে না বা কোনো বীজ নষ্ট হবে না। ক্ষেতে চারারোপনে কৃষকের শ্রমিক-সংকট নিরসন হবে। সঙ্গে খরচও কমবে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
রংপুর অঞ্চলে ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা ও চারা উৎপাদনে কৃষকদের মধ্যে সাড়া মিলেছে। ভবিষ্যতে অনেক কৃষকই নিজ উদ্যোগে ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে পারবেন বলে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এতে ধানগাছের চারা রোপণ, নিড়ানি ও ধানগাছ কর্তনসহ মাড়াইয়ের কাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে। ট্রে নির্ভর চাষাবাদ শুরু হলে শ্রমিক-সংকট নিরসনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে সঙ্গে কৃষক লাভবান হবে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দাবি, ট্রে পদ্ধতি বীজতলা ও চারা তৈরির পর কৃষকরা উন্নত যন্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। এতে ধান চাষে শ্রমিক-সংকট নিরসন ও ব্যয় কম হবে। সনাতন পদ্ধতিতে চারা তৈরি করতে ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু ট্রে পদ্ধতিতে চারা তৈরি হয় ২৫ থেকে ৩০ দিনে। ট্রের মধ্যে চারা থাকে বলে পরিচর্যা বেশি হয়। ফলে প্রতিটি চারা রোগ মুক্ত সুস্থ সবল হয়।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, রংপুর জেলার ১ হাজার ২০০ ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ট্রে পদ্ধতি অনুসরণ করলে বোরোর চারা বেশি সবল হবে। আর সবল চারা দ্রæত বেড়ে ওঠে এবং ফলন ভালো হয়। বেশি ফলন হলে কৃষকের লাভও বেশি হবে। যাতে কৃষক খরচ কমিয়ে বেশি লাভবান হতে পারে, সেটাকে গুরুত্ব দিয়েই কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
এই বিভাগের আরও খবর