লালমনিরহাট বার্তা
আদিতমারী ও কালীগঞ্জে স্কুল পর্যায়ে মনো-সামাজিক সচেতনতা উন্নয়ন শীর্ষক কর্মশালা
বিশেষ প্রতিনিধি | ২৪ এপ্রি, ২০২৪, ৭:২৬ AM
আদিতমারী ও কালীগঞ্জে স্কুল পর্যায়ে মনো-সামাজিক সচেতনতা উন্নয়ন শীর্ষক কর্মশালা

কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়ন ও উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য স্থিতিস্থাপকতা তৈরির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে গত ২২ এপ্রিল সকালে আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীরহাট এস. সি স্কুল এন্ড কলেজে এবং বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলার লোহাকুচি স্কুল এন্ড কলেজে স্কুল পর্যায়ে মনো-সামাজিক সচেতনতা উন্নয়ন শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় পৃথক দুটি কর্মশালায় বিষয়ের উপর আলোচনা করেন ভারতের পশ্চিম বঙ্গের ব্লু-মাইন্ড এর মেম্বার ডাইরেক্টর ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী ড. প্রবীর রায় ও ব্লু মাইন্ড মেম্বার চেয়ারপারসন পার্থ প্রতীম রায়। লালমনিরহাট বার্তার সম্পাদক গেরিলা লিডার ড. এস এম শফিকুল ইসলাম কানু।

কুমড়ীরহাট এস. সি স্কুল এন্ড কলেজে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, আদিতমারী উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম কাজল। উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান শিক্ষক পূর্ণ চন্দ্র বর্মন, গভর্নিং বডির সভাপতি রফিজউদ্দিন, স্কুলের শিক্ষক মৃনাল কান্তি রায়, শিক্ষার্থী শ্রেষ্ঠ রায় ও ভূমিকা রায় প্রমূখ। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মোছাঃ সেলিনা খাতুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সহকারী শিক্ষক শিপ্রা সরকার। কর্মশালায় কুমড়ীরহাট এস সি স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন জন অংশগ্রহন করেন।

বিকালে লোহাকুচি স্কুল এন্ড কলেজে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মাহমুদুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন, তালুক দুলানী রাজকাচারী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার রায়, অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম কাজল, লোহাকুচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক গোলাম সোহরাব, শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল, লামিয়া জামান, নিঝুম শাহ্ প্রমূখ। কর্মশালায় অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ ৪০ জন অংশ গ্রহন করেন।

উল্লেখ্য, এই কর্মশালার লক্ষ্য হচ্ছে:

(১) কিশোর-কিশোরীদের জীবনের জটিলতাগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সক্ষম করা।

(২) তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাদুর্ভাব কমানো।

(৩) খোলামেলা কথোপকথনকে উৎসাহিত করে এমন একটি সহযোগী স্কুল এবং পারিবারিক পরিবেশ গড়ে তোলা।

(৪) শিক্ষাগত পারফরম্যান্স এবং ভবিষ্যতের কর্মজীবনের সম্ভাবনা উন্নত করা।

(৫) স্বাস্থ্যকর এবং আরও স্থিতিস্থাপক/প্রাণবন্ত সমাজ গড়ে তোলা।

কর্মশালার উদ্দেশ্য:

(১) শিক্ষক, স্কুল কর্মী এবং বাবা-মায়েদের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মানসিক কষ্টের লক্ষণগুলি সনাক্ত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া।

(২) শিক্ষক, স্কুলের কর্মচারী এবং অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক যন্ত্রণার লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা যায়।

(৩) সমবয়সীদের/সহকর্মী সহায়তায় প্রোগ্রাম গুলি বাস্তবায়ন করা যাতে নিজের সম্পর্কের অনুভূতি জাগ্রত হয়, সহমর্মিতার ভাব গড়ে তোলা এবং সাহায্য-সন্ধানী আচরণগুলিকে উৎসাহিত করা।

(৪) মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবিদের কাছে যোগাযোগের/ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যাতে ব্যক্তিগত এবং দলগত পরামর্শ করা যায়।

(৫) মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলি নিয়ে অপরাধবোধ দূর করতে এবং সাহায্য চাওয়ার আচরণকে উৎসাহিত করতে সচেতনতা মূলক অভিযান পরিচালনা করা।

(৬) ছাত্র-ছাত্রী এবং পরিবারের জন্য অতিরিক্ত সমর্থন ও সেবা প্রদানের জন্য সম্প্রদায়িক(community) সংগঠনগুলির সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।

পদ্ধতি সমূহ:

(১) শিক্ষক প্রশিক্ষণ: কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করে শিক্ষকদের ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং সাড়া দিতে সক্ষম করার জন্য দক্ষতা উন্নয়ন করা।

(২) সহকর্মী সমর্থন কার্যক্রমঃ সহকর্মী সমর্থন গ্রুপ বা পরামর্শদান কার্যক্রম গঠন করা যেখানে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে এবং অপরকে মানসিক সমর্থন দিতে পারে।

(৩) পরামর্শ সেবাঃ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের সাথে সহযোগিতা করে স্কুল পরিবেশে বা রেফারেলের মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং গোষ্ঠী পরামর্শ সেসন প্রদান করা।

(৪) সচেতনতা মূলক প্রচার অভিযান: মানসিক স্বাস্থ্য এবং প্রাপ্তব্য সম্পদ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কর্মশালা, সেমিনার এবং ইন্টারেক্টিভ/মিথষ্ক্রীয় কার্যকলাপের আয়োজন করা। স্কুল সমাবেশ, অভিভাবক-শিক্ষক সভা এবং ছাত্র প্রকাশনার মত বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করা।

(৫) সামাজিক অংশীদারিত্ব: স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্য সংগঠন, এনজিও এবং অভিভাবক সমিতিগুলির সাথে সহযোগিতা করে শিক্ষার্থী এবং পরিবারগুলির জন্য উপলব্ধ সমর্থন পরিষেবা এবং সম্পদ সম্প্রসারিত করা।

উপসংহার: স্কুল পর্যায়ে মানসিক সচেতনতা গড়ে তোলা হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য একটি বিনিয়োগ। কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সুস্থতা পরিচালনার জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সমর্থ করে আমরা তাদের সম্পুর্ণ মুক্তি দিতে এবং আরও স্বাস্থ্যকার, সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম করতে পারি।

এই বিভাগের আরও খবর