লালমনিরহাট বার্তা
ওয়ালটন-মিরাজ নৈপুন্যে খুলনাকে বিদায় করে টিকে থাকলো চট্টগ্রাম
বার্তা অনলাইন ডেস্কঃ | ১৪ ফেব, ২০২২, ১২:৩১ PM
ওয়ালটন-মিরাজ নৈপুন্যে খুলনাকে বিদায় করে টিকে থাকলো চট্টগ্রাম
ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাঁদউইক ওয়ালটনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সাথে মেহেদি হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুন্যে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে উঠলো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
আজ টুর্নামেন্টের এলিমিনেটর ম্যাচে চট্টগ্রাম ৭ রানে হারিয়েছে মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্সকে। এ ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলো খুলনা।
আজ সন্ধ্যায় প্রথম কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ঐ ম্যাচে হেরে যাওয়া দলের সাথে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে খেলবে চট্টগ্রাম।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৯ রান করে চট্টগ্রাম। ওয়ালটন ৪৪ বলে অপরাজিত ৮৯ রান করেন। পঞ্চম উইকেটে মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে ৫৮ বলে ১১৫ রানের জুটি গড়েন ওয়ালটন। মিরাজ ৩০ বলে ৩৬ রান করেন। এরপর বল হাতে ২ উইকেটও নেন মিরাজ। ১৯০ রানের জবাবে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮২ রান করে খুলনা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন খুলনার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই মিড উইকেট দিয়ে চার মারেন চট্টগ্রামের ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার কেনার লুইস। চতুর্থ বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে হাকান ছক্কা। লুইসের এমন শুরুর মধ্যে ধাক্কা খায় চট্টগ্রাম। খুলনার পেসার খালেদ আহমেদের করা ওভারের শেষ বলে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন লুইসের সতীর্থ জাকির হাসান।
তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক আফিফ হোসেনকে দ্রুত বিদায় দেন খুলনার বাঁ-হাতি পেসার রুয়েল মিয়া। পুল শট খেলতে গিয়ে ব্যাট-বলের টাইমিং মেলাতে না পেরে, আকাশে ক্যাচ তুলে দেন আফিফ। উইকেটের পেছনে সেটি তালুবন্দি করতে ভুল করেননি প্রতিপক্ষ নেতা মুশফিক। ৩ বলে ৩ রান করেন আফিফ।
১৬ রানে ২ উইকেট পতনের পর চট্টগ্রামের রানের চাকা ঘুড়ান লুইস ও তার স্বদেশি ওয়ালটন। তবে মারমুখী মেজাজে ছিলেন না তারা। তাই ৭ ওভার শেষে চট্টগ্রামের রান ছিলো ২ উইকেটে ৪১।
শ্রীলংকার থিসারা পেরেরার করা অষ্টম ওভারের প্রথম দুই বলে ১০ রান আদায় করে নেন লুইস। তবে পরের ওভারের প্রথম বলে থামতে হয় লুইসকে। বাঁ-হাতি স্পিনার নাবিল সামাদের বলে লেগ বিফোর আউট হন লুইস। ৩২ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৯ রান করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে ওয়ালটন-লুইস ৩৫ বলে ৩৮ রান যোগ করেন।
দলীয় ৫৪ রানে লুইসের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন শামিম হোসেন। ১০ম ওভারের প্রথম দুই বলে ২টি চার মারেন শামিম। কিন্তু চতুর্থ বলে লেগ বিফোর হন তিনি। এডিআরএস নিয়েও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি ৭ বলে ১০ রান করা শামিম।
১০ ওভার শেষে চট্টগ্রামের স্কোর ৪ উইকেটে ৬৬ রান। এ অবস্থায় রানের গতি বাড়াতে মনোযোগি হন ওয়ালটন ও ক্রিজে নতুন ব্যাটার মেহেদি হাসান মিরাজ। মাহেদির করা ১২তম ওভারে ১৮ রান তুলেন তারা। খালেদের করা ১৩তম ওভারে ১৪ রান তুলেন ওয়ালটন-মিরাজ।
রুয়েলের করা ১৫তম ওভারে ২২ রান তুলেন ওয়ালটন-মিরাজ।এই ওভারে ২টি করে চার-ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ওয়ালটন। ২৯তম বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পা দেন তিনি। আর এই ওভারেই ২৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরির জুটিও গড়েন তারা।
১৬তম ওভার থেকে ১৪ রান তুলেন ওয়ালটন-মিরাজ। কিন্তু ১৭তম পেরেরা ৫ রান দিলেও, ১৮তম ওভারে ১০ রান দেন মাহেদি। এতে দেড়শ রান স্পর্শ করে চট্টগ্রাম।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে পেরেরা ৫ রান দিলেও, তৃতীয় ও ইনিংসের ১৯তম ওভারে ২০ রান দেন পেরেরা। প্রথম চার বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন ওয়ালটন। এতে ৪৩ বলে ৮৮ রানে পৌঁছে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান ওয়ালটন।
শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩০ বলে ৩৬ রান করা মিরাজকে বোল্ড করেন খালেদ। পঞ্চম উইকেটে মাত্র ৫৮ বলে এবারের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১১৫ রানের জুটি গড়েন ওয়ালটন ও মিরাজ। আর এই জুটিতে ২৮ বলে ৭৮ রান তুলেন ওয়ালটন।
শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মারেন ইংল্যান্ডের বেনি হাওয়েল। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৯ রানের সংগ্রহ পায় চট্টগ্রাম। শেষ ওভারে মাত্র ১ বল খেলেছেন ওয়ালটন। তাই ৮৯ রানে অপরাজিত থাকতে হয় তাকে। তার ৪৪ বলের ইনিংসে ৭টি করে চার-ছক্কা ছিলো। ৩ বলে ৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন হাওয়েল। খুলনার খালেদ ২টি, নাবিল-রুয়েল ও মাহেদি ১টি করে উইকেট নেন।
১৯০ রানের বড় টার্গেটে খেলতে নেমে চট্টগ্রামের স্পিনার নাসুম আহমেদের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন খুলনার হয়ে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার।
আগের ম্যাচে ফ্লেচারের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ১৮২ রান করা মাহেদি, আজ ছিলেন ফ্লপ। ২ রান করে নাসুমের শিকার হন মাহেদি। তবে শুরুতেই সতীর্থকে হারালেও ব্যাট হাতে মারমুখী ছিলেন ফ্লেচার। নাসুম-মিরাজকে ১টি করে ছক্কা ও চার মারেন তিনি।
পঞ্চম ওভারের প্রথমে বলে বিদায় ঘটে তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকারের। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়া সৌম্য করেন ১ রান।
৪৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিলো খুলনা। কিন্তু দলকে চাপ অনুভব করতে দেননি ফ্লেচার ও নতুন ব্যাটার মুশফিক। ১২ ওভারেই দলের স্কোর শতরানে পৌঁছে দেন তারা।
হাওয়েলের করা ১০ম ওভারে দু’টি ছক্কা মারেন মুশফিক। ঐ ওভারে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৩০তম হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন ফ্লেচার। এ জন্য তিনি বল খেলেছেন ৩৪টি।
১৩তম ওভারের প্রথম বলে ফ্লেচার-মুশফিক জমে যাওয়া জুটি ভাঙ্গেন মিরাজ। ২৯ বলে ৪৩ রান করা মুশফিককে বিদায় দেন তিনি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়ার আগে নিজের ইনিংসে ১টি চার ও ৪টি ছক্কা মারেন মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে ফ্লেচার-মুশফিক ৪৯ বলে ৬৪ রান যোগ করেন।
মুশফিকের বিদায়ের পর দেখেশুনে খেলেছেন ফ্লেচার ও ইয়াসির আলি। মিরাজের করা ১৫তম ওভারে প্রথম বলে ফ্লেচারের ছক্কার পর, জীবন পান ইয়াসির। লং-অফে ইয়াসিররের ক্যাচ ফেলেন আফিফ। তখন ব্যক্তিগত ৯ রানে দাঁড়িয়ে ইয়াসির।
এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ৪ ওভারে ৫৬ রানের সমীকরন দাঁড় করে খুলনা। শরিফুল ইসলামের ১৭তম ওভার থেকে ১৩ রান নেন ফ্লেচার-ইয়াসির। মৃত্যুঞ্জয়ের করা ১৮তম ওভার থেকে ১৯ রান পায় খুলনা। সেখানে ইয়াসির ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন।
শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য ২৪ রানের সমীকরনে, ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মারেন ইয়াসির। তবে শরিফুলের তৃতীয় বলে ডিপ পয়েন্টে হাওয়েলকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ইয়াসির। ২৪ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন ইয়াসির। ফ্লেচার-ইয়াসির ৩৮ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৬৫ রান তুলেন।
ইয়াসিরের বিদায়ের ওভারে ৮ রান পায় খুলনা। শেষ ওভারে ১৬ রানের প্রয়োজন পড়ে তাদের। মিরাজের করা প্রথম তিন বল থেকে ৩ রান নিতে পারেন ফ্লেচার-পেরেরা। চতুর্থ বলে ফ্লেচারের ব্যাট থেকে বাউন্ডারি আসে। পঞ্চম বলে ১ রান নিতে পারেন ফ্লেচার। আর শেষ বলে পেরেরাকে আউট করে, চট্টগ্রামের জয় নিশ্চিত করেন মিরাজ। শেষ ওভারে ১ উইকেট নিয়ে ৮ রান দেন মিরাজ। খুলনা করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮২ রান।
ফ্লেচারের ৫৮ বলে ৮০ রানের অনবদ্য ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত বৃথা যায়। তার ইনিংসে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। চট্টগ্রামের মিরাজ ৪০ রানে ২ উইকেট নেন। ১টি করে শিকার ছিলো নাসুম-শরিফুল ও মৃত্যুঞ্জয়ের। ম্যাচ সেরা হন চট্টগ্রামের ওয়ালটন
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ১৮৯/৫, ২০ ওভার (ওয়ালটন ৮৯*, লুইস ৩৯, খালেদ ২/৪০)।
খুলনা টাইগার্স : ১৮২/৫, ২০ ওভার (ফ্লেচার ৮০*, ইয়াসির ৪৫, মিরাজ ২/৪০)।
ফল : চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : চাঁদউইক ওয়ালটন (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)।(সূত্র: বাসস)
এই বিভাগের আরও খবর